বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ এসেছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ থেকে। বাংলাদেশের মানুষ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে গড়ে বেশি আয় করেন। শুক্রবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাথাপিছু জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ক্ষেত্রে টানা চার বছর ধরে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের সর্বশেষ হিসেবে ২০২৩ সালে এসে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২১ ডলার। আর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ১২ ডলার। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে মাথাপিছু জিডিপিতে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। সে বছর বাংলাদেশের জিডিপি মাথাপিছু বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫৯ ডলার। তখন পাকিস্তানের জিডিপি ছিল ১ হাজার ৪৮৬ ডলার। এরপর আর কোনো বছরই বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি পাকিস্তান। সর্বশেষ, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৭১ ডলারে। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলেও একেবারে নেতিবাচক ধারায় যায়নি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও নিয়ানমার থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এসব নিয়ে বিশ্বব্যাংক আসন্ন গ্লোবাল ইকোনমিক্স প্রসপেক্টস রিপোর্টে আরও বিস্তারিত তুলে ধরবে, যা প্রকাশিত হবে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি।
তবে প্রতিবছর মাসিক গড় আয়ের যে হিসাব পাওয়া যায়, তা নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে নানা প্রশ্ন। কেননা, মাসিক গড় আয় বাড়লেও, বাড়ছে না মানুষের জীবনযাপনের মান। মানুষের আয়ের বেশিরভাগই চলে যায় বাড়ি ভাড়া ও খাবারের পেছনে। মুষ্টিমেয় এক শ্রেণির মানুষের আয় অত্যধিক বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে সকলের আয় বাড়ছে না। অধিকাংশ সাধারণ মানুষই মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে টিকে থাকার লড়াই করছে। মাসিক গড় আয় বাড়ার পরিসংখ্যান যেমন করা হয়, তেমনি মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে কিনা, তাও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। বিবিএসের প্রতিবেদনে আয়বৈষম্য প্রকট হওয়ার চিত্রও উঠে এসেছে। দেখা যায়, দেশের মোট আয়ের প্রায় ৪১ শতাংশই ভোগ করে ১০ শতাংশ ধনবান। ২০১৬ সালে আয়ের এই হার ছিল ৩৯। তবে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয়ের অংশীদারিত্ব কিছুটা বেড়েছে। ধনী মানুষ আরও বেশি আয় করার কারণে আয়বৈষম্যও আগের চেয়ে বেড়েছে। খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে গিনি সহগ (আয়বৈষম্য পরিমাপ পদ্ধতি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট। ২০১৬ সালে গিনি সহগ ছিল দশমিক ৪৮২ পয়েন্ট। সাধারণত দশমিক ৫০০ হলেই একটি দেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আয়বৈষম্য গ্রামের চেয়ে বেশি শহরাঞ্চলে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এতে সামাজিক সংহতি ক্ষুণ্ন হয়। বাড়ে অসন্তোষ ও সহিংসতা। দারিদ্র্য হ্রাস ও মানব উন্নয়নও হয় বাধাগ্রস্ত। সম্পদের অসম বণ্টনের কারণে অর্থনৈতিক দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। এর ফলে, পরিবেশগত ভারসাম্যও পড়েছে হুমকির মুখে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা আয়বৈষম্য নিরসনে সচেষ্ট হবে।
মোহাম্মদ আলী