ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

নির্বাচনের রোডম্যাপ

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নির্বাচনের রোডম্যাপ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বহু প্রত্যাশিত নির্বাচনের রোডম্যাপ তুলে ধরেছেন। বিষয়টি জাতিকে একইসঙ্গে স্বস্তি ও আনন্দ দিয়েছে। তার এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি আরও বলেছেন,  রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর  জন্য ছয়টি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য  কমিশন গঠিত হবে। যারা রাজনৈতিক দলসহ সকল পক্ষের সঙ্গে বসে, যে সকল বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলো চিহ্নিত করবে ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেবে। স্মরণ করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। এই আশ্বাসের পরও রাজনৈতিক দলসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে গিয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির নেতারা প্রায় নিয়মিতভাবেই সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য বলে আসছিলেন।
ড. ইউনূস তার ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেন, ‘প্রধান প্রধান  সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে  তৈরির ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে। আর এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে’।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার ঘোষণা দেয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। সেগুলো হলোÑ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। তারা ১১টি কমিশনের মধ্যে প্রথমে গঠন করা ৬টি কমিশন। তারা তাদের সংস্কার প্রস্তাব অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে। চলতি মাসের শেষ বা জানুয়ারির প্রথমদিকে সংস্কার কমিশনগুলো সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সংস্কার জরুরি। আর সেজন্যেই নির্বাচন হতে কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করেছিল। এখন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হলে গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত সুফল মিলবে না। গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটবে না। জনমনে ধারণা ছিল, বিদায়ী বছর বিদায় নেওয়ার আগে আগে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর হয়ত নির্বাচন নিয়ে একটি সুসংবাদ মিলবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণের কথা জানালেন। তিনি বলেছেন, আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। জাতি এখন সাগ্রহে অবাধ ও মুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বপ্ন দেখতেই পারে।

মোহাম্মদ আলী

×