ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

শ্রমজীবীদের অবমাননা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিকার

মারুফ হাসান

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রমজীবীদের অবমাননা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিকার

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে শ্রমজীবী মানুষের অবদান অপরিসীম। কিন্তু তাদের কাজের পরিবেশ ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস, নির্মাণ খাত, কৃষি এবং পরিবহন সেক্টরে শ্রমিকদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা ও মানবেতর জীবনের বাস্তবতা আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে। এর ফলে দেশের মানব সম্পদ তথা শ্রমজীবী মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
* ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের কারণসমূহ:-
১. নিরাপত্তার অভাব: বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই।
২. আইন বাস্তবায়নের ঘাটতি: শ্রম আইন থাকলেও কার্যকর তদারকির অভাবে তা বাস্তবায়িত হয় না।
৩. মুনাফাকেন্দ্রিক মানসিকতা: অনেক মালিক শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মুনাফা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়।
৪. শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব: শ্রমিকদের অনেকেই তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন।
৫. প্রযুক্তির অভাব: ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি অনেক প্রতিষ্ঠানে অপ্রতুল।
* ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমজীবীরা ও সমাজ:-
১. শারীরিক ক্ষতি: দুর্ঘটনা, দূষিত পরিবেশে কাজ এবং অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. মানসিক চাপ: কম মজুরি, কাজের অনিশ্চয়তা এবং অবমাননাকর আচরণের কারণে মানসিক অবসাদ তৈরি হয়।
৩. সমাজে বৈষম্য: শ্রমিকদের অবহেলিত অবস্থা সমাজে শ্রেণীবৈষম্য সৃষ্টি করে।
৪. উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া: শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও মনোবল দুর্বল হলে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
৫. জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি: শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
* প্রতিকার ও করণীয়:-
১. শ্রমিক সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ: প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।
২. মজুরি কাঠামোর উন্নয়ন: শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি: শ্রমিকদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৪. পর্যবেক্ষণ ও তদারকি: কর্মপরিবেশের মান যাচাই করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শন চালানো।
৫. প্রযুক্তির ব্যবহার: ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সহজ করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
৬. সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন: শ্রমিকদের সম্মানজনক মর্যাদা দেওয়ার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি।
আমাদের উচিত তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য শ্রমজীবীদের ঘামে ও পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের প্রতি অবমাননা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ জাতির উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তাই তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, মালিক ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা রক্ষা করেই আমরা একটি উন্নত ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
"আমাদের শ্রমজীবীদের নিরাপত্তা, আমাদের জাতির অগ্রগতি"
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজে।

×