আজ সোমবার ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪, বাংলাদেশের বিজয় দিবস। প্রতিবছর এই দিনটি আনন্দের সাথে উদযাপন করা হয়, কিন্তু এই মহান বিজয় দিবস একদিনে অর্জিত হয় নি। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান বিজয় দিবস।
এই নয় মাসে অনেক মা হয়েছে সন্তান হারা, বোন হয়েছে ভাই হারা এমনকি এই যুদ্ধে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য নবজাতক, নির্দোষ শিশুকেও। ২০২৪ এ এসে একটি প্রশ্ন, আমারা কি তাদের এই মহান ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি? এই দিনটিতে কি শুধু আনন্দ মিছিল করলেই তাদের রক্তের পরিপূর্ণ সম্মান করা হবে? ১৯৭১ সালে হিন্দু, মুসলিমসহ সকল ধর্মের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ভুলে একই সাথে লড়াই করে শত্রু পক্ষকে পরাজয়ের মাধ্যমে অর্জন করে আমাদের এই মহান স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের বিজয় দিবসের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলো এই দেশের মানুষের একতা, দেশ ও ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের প্রাণের মায়া না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এই দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে। তাঁরা যদি প্রাণের বিনিময়ে আমাদের বিজয় এনে দিতে পারে তাহলে আমরাও তো পারি তাঁদের বিজয়ের পরিপূর্ণ সম্মান দিতে। তার জন্য শুধু প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর কোমল মানসিকতা।
বাংলায় একটি কথা আছে- "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন"। আমরা কি সত্যিই রক্ষা করতে পারছি তাদের অর্জিত এই স্বাধীনতা? আমার কী পারি না সাম্প্রদায়িকতা ভুলে সকলে একসাথে এদেশকে ভালোবাসতে? এদেশ তো শুধু আমার না, এটা আমাদের সকলের দেশ। এই দেশের প্রতি আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমরা কি পারি না এদেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে? দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে বলে এই নয় যে বিভিন্ন রাস্তা ব্লক করে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা।
আমরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেরা ঠিক থাকি তাহলে কখনোই আমাদের দেশে দুর্নীতি স্থান পাবে না। আমরা কি পারি না মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে? অবশ্যই পারি, তার জন্য প্রয়োজন শুধু সঠিক মানসিকতা। ত্রিশ লক্ষ শহীদ যদি প্রাণের বিনিময়ে দেশকে বাঁচাতে পারে তাহলে আমরাও তো পারি কোমল মানসিকতার মাধ্যমে এদেশকে সাজাতে।
আজকে যারা দুর্নীতি, চোরাচালান, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাই ইত্যাদি খারাপ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছে তারাও এগুলো করে ভালো থাকার জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই ভালো থাকতে পারে না। আমরা যা কিছু করি শুধু ভালো থাকার জন্য কিন্তু অন্যের ক্ষতি করে কেন? অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না পারছি নিজে ভালো থাকতে না দিচ্ছি অন্যকে ভালো থাকতে। শুধু শুধু নষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। নষ্ট হচ্ছে একে অপরের সম্প্রতি। আমাদের শহীদ ভায়েরা তো জীবন দিয়েছিলো এদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্যই।
১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে পারবো সেই দিন, যে দিন দেশে সকল অরাজকতা দূর করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবো আর এটা আমরা অবশ্যই পারবো। আসুন আমরা সবাই এক সাথে প্রতিজ্ঞা করি "নিজে ভালো থাকবো অন্যকে ভালো রাখবো" আর এখানেই আছে লাখো শহীদের সার্থকতা।
অর্থনীতি বিভাগ - ঢাকা কলেজ
কুতুবে রব্বানী