ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

মাদক নিয়ন্ত্রণে অস্ত্র

প্রকাশিত: ১৯:১২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

মাদক নিয়ন্ত্রণে অস্ত্র

দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রকম মাদকের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। মাদক ব্যবসা, পাচারকারী, মাদক বিক্রেতাসহ ব্যবহারকারীদের বমাল ধরতে গেলে প্রায় সময়ই নানা সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। এ নিয়ে প্রতিবছর খুনখারাবিও কিছু কম হয় না। আহতের খবরও আছে।  অনেক সময় মাদক চোরাচালান ও বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতসহ ব্যাপক সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। একে কেন্দ্র করে সাধারণ নিরীহ পথচারী, নারী ও শিশুর হতাহতের খবরও আছে। এমতাবস্থায় সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এখন থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন নিজেদের সুরক্ষা এবং মাদক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণের নিমিত্তে। আপাতত উপ-পরিচালক থেকে উপ-পরিদর্শক পর্যায়ে ৫৭৯ কর্মকর্তা এই সুযোগ পাবেন। তাদের ৯ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক পিস্তল টি-৫৪ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা ২০২৪ জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ঠেকাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করে থাকে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত জনবল নিয়মিত মাদক উদ্ধার অভিযান, মাদক চোরাচালানকারীদের গ্রেপ্তার, মামলা তদন্ত ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত। স্বভাবতই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বিশেষ করে রাতের বেলা কর্মকর্তাদের সমূহ জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। কেননা, মাদক ব্যবসায়ীরা স্বভাবতই বেপরোয়া ও হিংস্র প্রকৃতির। সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরের সদস্যদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় প্রণীত হয়েছে এই নীতিমালা। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবিও ছিল দীর্ঘদিনের।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জারিকৃত ক্ষুদ্রাস্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র-গোলাবারুদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার বা পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ একাডেমিতে অধিদপ্তরের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্র পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। পরে সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরির মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য নিকটস্থ জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি রুম, জেলা পুলিশ লাইনস বা থানা ব্যবহার করা যাবে। তবে অস্ত্র অবশ্যই রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করতে হবে। সর্বোপরি সর্বশেষ পন্থা হিসেবেই কেবল গুলিবর্ষণ করা যাবে। তবে মাদক কারবারিদের হাঁটুর নিচে পায়ে গুলিবর্ষণ করতে হবে। যাতে সম্ভাব্য মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়।
বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। আশঙ্কা এই যে, তরুণদের মধ্যে ইয়াবাসহ মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। পরে যারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। সারাদেশে বর্তমানে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে অন্তত লক্ষাধিক খুচরা মাদক ব্যবসায়ী, যাদের মধ্যে শতাধিক গডফাদার এমনকি জনপ্রতিনিধিও রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক খবর হলো, দেশ থেকে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের আড়ালে প্রতিবছর অন্তত দশ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ২৪ ধরনের মাদক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসবের মধ্যে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, মরফিন, হেরোইন, আইস ইত্যাদি বেশি। নতুন নতুন মাদকও আসছে দেশে। সে তুলনায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা আশানুরূপ নয়। কেননা, চোরাচালানিদের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগ, আধুনিক প্রযুক্তিসহ নিত্যনতুন অপকৌশল। সর্বোপরি বিপুল অর্থের হাতছানি ও লেনদেন। যেটি লক্ষণীয় তা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট মাদক কারবারি ও চোরাচালানিরা ধরা পড়াসহ জেল খাটলেও কিছুদিন পরেই গডফাদারদের সৌজন্যে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নিরাপত্তা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে দেশে মাদক সেবন ও বহনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও মাদকের চালান ও ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় মাদক নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।

মোহাম্মদ আলী

×