ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

বিজয়ের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজয়ের অঙ্গীকার

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ৫৩ বছর আগে এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল নয় মাসের যুদ্ধ শেষের গান। সমবেত কণ্ঠে শব্দসৈনিকরা গেয়ে উঠেছিলেন, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে।’ সেই আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন দেশÑ বাংলাদেশ। গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির দিন আজ। বিজয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত হওয়ার দিন।
দেদীপ্যমান, প্রসন্ন, আলোকিত বিজয় দিবস মানেই বাঙালির নবজন্ম। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার দিন। জাতি হিসেবে বাঙালির সহস্র বছরের সাধনা শেষে অর্জিত চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিন। বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তাদের রক্তে, অবদানে মুক্ত হয়েছিল স্বদেশ। পত পত করে উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর অদম্য সাহসিকতার ফসল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অকুতোভয় সংগ্রাম, রাজনৈতিক নির্দেশনায় লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, যাদের অবদান স্বাধীন বাংলাদেশ। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে আলবদর, রাজাকাররা বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের সহযোগীরা পর্যুদস্ত হয়ে বাধ্য হয় আত্মসমর্পণে। রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনারা। দখলদার পাকবাহিনীর দখলমুক্ত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যে রাষ্ট্রের মর্মবাণী হবে গণতন্ত্র। যে রাষ্ট্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মুক্তির আস্বাদ নিয়ে বসবাস করবে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও মাদক প্রতিহত করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে। ওইসব অপশক্তিকে সমূলে উৎখাত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করাই প্রত্যেক বাঙালির স্বপ্ন।
এ কথা সত্য যে, দেশবিরোধী নানা তৎপরতা এখনও চলমান এবং কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমানও বটে। বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নানাভাবে নানা উপায়ে দেশে ও বিদেশে বসে। এসব হীন ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক নাগরিককে সর্বদা সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করতে হবে দেশবিরোধী যাবতীয় অপশক্তিকেÑ বিজয়ের  মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক সকলের ঐকান্তিক অঙ্গীকার।

মোহাম্মদ আলী

×