ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

পাপিয়া সারোয়ার-হেলাল হাফিজ

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পাপিয়া সারোয়ার-হেলাল হাফিজ

আমাদের শিল্পভুবন ও কবিতাঙ্গনকে হতবিহ্বল করে চোখের আড়াল হলেন দুই গুণীজন- রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ও কবি হেলাল হাফিজ। নিয়তির এই যুগল আঘাতে আমরা শোকগ্রস্ত। ব্যাধি দংশিত ছিলেন দুজনই। বয়সও হয়ে গিয়েছিল। তবু উভয়ের মৃত্যু জাতির জন্য অকাল প্রয়াণস্বরূপ। এমন গুরুত্বপূর্ণ  শিল্পী ও কবি যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেন না। তাই আমরা ব্যথিত, ভারাক্রান্ত।
শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ঐশ্বর্য, গায়কী এবং শুদ্ধতার জন্য অল্পকালের ভেতরেই রবীন্দ্রসংগীত বোদ্ধাদের সমীহ অর্জন করেছিলেন। সব বয়সী সংগীতপ্রেমীদের মাঝে প্রিয় হয়ে ওঠেন। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের যে ক’জন শিক্ষার্থী রবীন্দ্রনাথের দীক্ষায় বিশেষ উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্জন করতে যান, পাপিয়া সারোয়ার ছিলেন তাদের একজন। অবশ্য তারও আগে গানের পাখি পাপিয়া দেশের শীর্ষ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাগুরুদের কাছেও তালিম গ্রহণ করেছিলেন। এমন একজন শিল্পী যে ভবিষ্যতে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগীতশিল্পী হয়ে উঠবেন, এতে আর সন্দেহ কী।  ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক অর্জন করেন। তার অনন্য কণ্ঠ ও পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
‘এখন  যৌবন যার মিছিলে যাবার তার  শ্রেষ্ঠ সময়,/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ উত্তাল ষাটের দশকে কবি হেলাল হাফিজের এই উচ্চারণ সর্বস্তরের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। তিনি ছিলেন এক দুঃখী কবি। বলেছেন, হরেক রকম কষ্ট আছে কষ্ট নেবে কষ্ট!/ লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট... সব কষ্টের অবসান হলো শুক্রবার। কবি চলে গেলেন।  কবির রচনা হতে পারে চিরজীবী, কিন্তু কবি রক্তমাংসের মানুষ, নশ্বর মানুষ; তাই কবিকেও বিদায় নিতে হয়।
কবিতা লিখে সব শ্রেণির মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া কম কথা নয়। বাংলার মানুষের এই এক বিশেষ মহিমা যে তারা কখনোই ভাষার প্রকৃত সম্পদ চিনে নিতে ভুল করে না। নিঃসঙ্গ মানুষ ও প্রেমিক কবি হেলাল হাফিজকে মনের নিভৃত কোণে ভালোবাসার আসন পেতে দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। কবিতা সংকলনটি প্রকাশিত হওয়ার পর ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবিতা একাত্তর। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি  কেঁদো না’। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে  পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে কবি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রকৃত শিল্পী-কবিরা হলেন সংস্কৃতি ও  প্রকৃতির মোহন বীণা। পাপিয়া সারোয়ার ও হেলাল হাফিজ বিদায় নিলেন বিজয়ের মাসে। উভয়ের শিল্পনিবেদন দেশের মানুষকে আনন্দ ও প্রেরণা দেবে। 

মোহাম্মদ আলী

×