লেবানন ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ২৭ নভেম্বর ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। ঠিক একই দিনে সিরিয়ার ইদলিব থেকে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের বিদ্যুৎগতির অগ্রাভিযানের মুখে বাশারের সামরিক বাহিনীর অবিশ্বাস্য পরাজয় পশ্চিমা বিশ^সহ আন্তর্জাতিক সব মহলকে বিস্মিত করেছে। বিশ্লেষকরা কিছুদিন পূর্বেও ধারণা করেছিলেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশারের বিজয় হয়েছে, কারণ তিনি তাদের প্রায় দমন করতে সফল হয়েছেন। প্রায় দশ বছর বাইরে রাখার পর গত বছর আরব দেশগুলোর প্রধান সংগঠন আরব লীগে সিরিয়াকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, বাশার সিরিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেছেন। আরব লীগে সিরিয়ার ফিরে আসা মানেই প্রতিবেশী সৌদি আরবসহ বাকি ২১ আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতন হলে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাবিরোধী মুখ হিসেবে বাশার পরিচিত হতে শুরু করেন। তিনি রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন। সিরিয়ায় আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর দেশটিতে অনেক সরকারবিরোধী গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করে। তাদের মধ্যে কুর্দি বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থন প্রদান করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সালে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বিদ্রোহীরা মূলত তুরস্কের নিকট থেকেই সমর্থন পেয়ে আসছিল বলে পশ্চিমা গণমাধ্যম দাবি করেছিল। বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহায়তা করলেও তুরস্ক এইচটিএসকে জঙ্গি গোষ্ঠীর তালিকায় রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘও সংগঠনটিকে জঙ্গি গোষ্ঠীর তালিকায় রেখেছিল। তবে আসাদবিরোধী যুদ্ধে এইচটিএসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পরোক্ষ সমর্থন ছিল।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর সিরিয়ায় গোপন ও প্রকাশ্য হামলা চালিয়ে আসাদের সেনাবাহিনীকে ভীষণ দুর্বল করে দিয়েছিল। তারা সেখানে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের তৎপরতা নস্যাৎ করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো আর্থিকভাবে সিরিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। ফলে দেশটিতে বাশারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইচটিএস কখনো ইসরাইলে আক্রমণ করার হুমকি দেয়নি। একটি প্রতিবেদনে পত্রিকাটি দাবি করে, ২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন কূটনীতিক জেমস জেফরি বলেছিলেন, ইদলিবের বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে জুলানিই ‘সবচেয়ে কম খারাপ’। আসাদ সরকারের পতনে দেশটিতে ইরান, রাশিয়া ও লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রভাব অনেকটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, আসাদের পতন ইসরাইলের সামরিক অভিযানের ফসল। যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের সমর্থন দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশটিতে বিদ্যমান তাদের সামরিক ঘাঁটি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছে। এ ছাড়া ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারাও সিরিয়া থেকে সরে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আসাদের পতনে মধ্যপ্রাচ্যে চাপে পড়েছে ইরান। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হারিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ার নাটকীয় পরিস্থিতির প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে মস্কো নজর রাখছে। বাশার সরকারের পতন রাশিয়ার মর্যাদার জন্য একটি আঘাত। বাশার সরকারকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ রাশিয়াকে হামিমিমের বিমান ঘাঁটি ও টারতুসের একটি নৌঘাঁটি ৪৯ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করার সুযোগ পায়। এসব ঘাঁটি আফ্রিকায় সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ ঘাঁটিগুলোকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। বাশার ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার একনিষ্ঠ মিত্র। ক্রেমলিন তাঁর পেছনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। রাশিয়া আগে থেকেই বলে আসছিল, সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জড়িত রয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বরও মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা একটা জটিল খেলা। অনেক খেলোয়াড় এখানে সম্পৃক্ত। আসাদ সরকারের বিস্ময়কর পতন শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, সমগ্র বিশে^ কম্পন সৃষ্টি করেছে। আকস্মিক এমন পতনে কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে চলা বৃহৎ ক্ষমতার লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম অ্যাক্সিওস পোর্টালের তথ্য বলছে, সিরিয়ায় ১৪ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত হয়েছিল মূলত ইসরাইলের সঙ্গে হামাস, হিজবুল্লাহ ও বাশার আল-আসাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ অন্যান্য ইরান সমর্থিত প্রক্সিগুলোর মধ্যে ১৪ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ার তাঁর ‘বড় পরিকল্পনা’র কথা উল্লেখ করেছিলেন। পরিকল্পনাটি ছিল: ইরানপন্থি প্রতিরোধ অক্ষের মাধ্যমে ইসরাইলকে ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু ইসরাইল প্রতিরোধ অক্ষগুলোকে অনেকটাই নড়বড়ে করে দিয়েছে। জো বাইডেন এক ভাষণে বলেন, ৭ অক্টোবরের পর যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ হামাসকে প্রতিরোধের কথা বলছেন, তখন ইরান ও তার প্রক্সিগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে বহুমুখী যুদ্ধ শুরু করার পথ বেছে নেয়। ইরানের দিক থেকে এটি ছিল ঐতিহাসিক ভুল। বাশারের পতনের পর তিনি বলেছেন, সিরিয়া ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার একটি সময়ের মধ্যে রয়েছে আর কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম সেখানে রাশিয়া, ইরান বা হিজবুল্লাহ কোনো প্রভাবশালী ভূমিকায় নেই।
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রথম ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, রাশিয়া ও বাকি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতনের ‘গভীরতা ও ফলাফল’ কী হতে পারে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, গোলান মালভূমিতে জাতিসংঘের টহলযুক্ত নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনীর দখল করে নেওয়া এলাকার চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। গত রবিবার আসাদের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় ৭৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)-এর কমান্ডার জেনারেল মাইকেল ইরিক কুরিলা এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা আইএস’কে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির সুবিধা নিতে এবং তাদের পুনর্গঠন করতে দিব না। সেইসঙ্গে সিরিয়ায় সকল গোষ্ঠীর জানা উচিত যে, তারা আইএসকে সাহায্য করলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। সেন্টকমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইএসের সক্ষমতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র তার আঞ্চলিক মিত্রদের নিয়ে সিরিয়ায় অভিযান অব্যাহত রাখবে। আসাদের পতনের পর ইসরাইলি বাহিনীও সিরিয়ায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনী সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০০ হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের প্রভাবশালী গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আসাদ পরবর্তী সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরাইলের উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বাশারের পতনের পরবর্তী পরিস্থিতি ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। বাশারের পতনের পর জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ক্ষমতার মসনদও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জর্দানের বর্তমান হাশেমি শাসকদের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন গোষ্ঠীর অসন্তোষ রয়েছে এবং যেকোনো সময় তা বিস্ফোরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইসরাইলের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সীমান্ত রয়েছে জর্দানের সঙ্গে। জর্র্দানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে থাকা সকল প্রতিবেশীদের সীমান্তের মধ্যে জর্র্দানের সীমান্তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সিরিয়ার অস্থিরতা জর্র্দানে ছড়িয়ে পড়ে তবে জর্দানের সীমান্তে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর জন্য নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
সিরিয়ার বাশারবিরোধী সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বরং সাম্প্রতিক সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকেও নজর দিতে পারে। এতে সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে জর্দান, সিরিয়া ও ইরাকের সীমান্ত যেখানে মিলিত হয়েছে সেই আল তানফে সীমিত সংখ্যক সৈন্য যুক্তরাষ্ট্র মোতায়েন করে রেখেছে। তবে কাতার, ইরাক এবং সৌদি আরব ইসরাইলের এমন দখলের নিন্দা জানিয়েছে। সিরিয়ায় ইসরাইলি অনুপ্রবেশকে বিপজ্জনক এবং সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের ওপর নির্লজ্জ আক্রমণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেছে দেশগুলো। ইসরাইলের এমন কার্যকলাপের নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি বলেছে, গোলান মালভূমি আরব ভূখণ্ডের। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ অভিযোগ করেছেন, বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ‘রাশিয়ার সকল প্রচেষ্টা ভেস্তে দেওয়া’। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হলে সিরিয়ায় ২০০৩ সালের ইরাক ও ২০১১ সালের লিবিয়ার মতো বিশৃঙ্খলার পুনরাবৃত্তি হবে। ইরান দাবি করেছে, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএসের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে সিরিয়ার মাধ্যমে লেবাননে ইরানের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা যাবে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনকে অনেক বড় মোড় পরিবর্তনকারী বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার ভূরাজনীতি বিশ্লেষক আলেকজান্ডার ডুগিন বলেছেন, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে সবকিছু ওভারল্যাপ হচ্ছে। স্মোট্রিচ ও অন্যান্য জায়ানবাদীরা থার্ড টেম্পল নির্মাণ শুরু করার জন্য আল-আকসা মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। আর তারা সম্ভবত তা করবে। এটি ইসলামি বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। আর রাশিয়া পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে। শিগগিরই সবকিছু বদলে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিরিয়ায় বাশার সরকারকে উৎখাতে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল তুরস্ক। সমগ্র পৃথিবী যখন ইসরাইল-ফিলিস্তিন, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ, ইরান এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত; সিরিয়ার বিদ্রোহীরা সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদল চলছে। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে বিদ্রোহীরা। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে অনেকটা অসম্ভব কাজকে তারা সহজ করেছে। বাশারকে সরালেও বিদ্রোহী গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল জুলানির জন্য সিরিয়ায় একটি ক্রান্তিকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় শান্তি ও পুনর্মিলনকে উন্নীত করার কাজটা অতটা সহজ হবে না। আঙ্কারাভিত্তিক ঝঊঞঅ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ ক্যান একুন সিরিয়া গঠনে তুরস্কের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, সিরিয়ায় আঙ্কারার দুটি প্রধান অগ্রাধিকার রয়েছে। একটি হচ্ছে ইদলিব থেকে দেইর ইজোর পর্যন্ত অঞ্চলজুড়ে পরিচালিত সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্রবিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে পুনর্মিলন সহজতর করা এবং আরেকটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা। যা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। একুন এটিও জানিয়েছেন যে, তুরস্ক ইতোমধ্যেই ইসলামিক স্টেট গ্রুপ এবং কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে তার অভিযানের পর উত্তর সিরিয়ায় একটি শাসন মডেল প্রস্তুত করেছে। এই মডেলের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার, সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি, অ্যাসেম্বলিভিত্তিক স্থানীয় শাসন এবং একটি সমন্বিত স্থানীয় অর্থনীতি। বিদ্রোহী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে। তা এখনো অস্পষ্ট। তবে আল-জাজিরার প্রতিবেদন ও সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলানি একটি ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ তৈরির ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। এখন সময়ই বলে দিবে কী হতে যাচ্ছে সিরিয়ায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ আলী