ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে সাশ্রয়

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৪৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুতে সাশ্রয়

দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সড়ক অবকাঠামোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এই সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং মংলা বন্দরের তৈরি হয়েছে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মা সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২৬ জুন। এটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সংকোচননীতি গ্রহণ করার ফলে চূড়ান্ত ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এতে সেতু নির্মাণ ব্যয়ে সাশ্রয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণ থেকে ৫৩০ কোটি টাকা এবং নদীশাসনের কাজে সাশ্রয় হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণে ১৭৮ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধিজনিত বরাদ্দ (প্রাইস কনটিনজেন্সি) থেকে ৫০০ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণ থেকে ১০৩ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ২০০ কোটি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ২৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব প্রকল্পে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।  ফলে অধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান। পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকায়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেতুর নকশা পরিবর্তন করে রেল সংযুক্ত করে। মেয়াদ ২০১৮ সাল ধরলেও পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে দু’বার বেড়েছে মেয়াদ ও খরচ। এই সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও পরে পিছিয়ে যায় দুর্নীতির অভিযোগে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও ক্ষমতাসীন সরকারের মধ্যে সম্পর্কে দেখা দিয়েছিল টানাপোড়েন। যদিও এটি সত্য প্রমাণিত হয়নি। তবে গত এক দশক যাবত প্রতিটি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য প্রায়ই শোনা গেছে। সাধারণ মানুষের চোখে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পর্দা দেওয়া হয়েছিল। জবাবদিহির আড়ালে প্রতিটি সেক্টরে চলেছে শতকোটি টাকার লুটপাট। ছিল না প্রকল্প খরচ কমানোর কোনো দায়বদ্ধতা। বড় প্রকল্প নিলে সবাই নিজের আখের গোছাতে থাকত ব্যস্ত। লাভের অংশ বণ্টন করা হতো পরিকল্পনা কমিশন থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে।  
রেলওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সাশ্রয় হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের একটি অংশ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু হয় ১ নভেম্বর। বাকি অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চলতি মাসেই চালু হওয়ার কথা জানান রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, এই প্রকল্পে যে অর্থব্যয় হয়েছে তা দিয়ে ডবল রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রতিকিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে যে পরিমাণ খরচ হয়, সেভাবে পরিকল্পনা করলে একই খরচে পদ্মা সেতুসহ যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি ডবল লাইন করা যেত বলে জানিয়েছেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। বাস্তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা হলেও সম্পূর্ণ রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তাই ভবিষ্যতে সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক থাকবে বলেই প্রত্যাশা।

মোহাম্মদ আলী

×