ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে ঢাকা : সমাধান কি!

সাকিবুল হাছান

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে ঢাকা : সমাধান কি!

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৬ টি দূষিত শহরের মধ্যে দ্বিতীয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সময় ঢাকার স্কোর ছিল ২২৮ মানকেখুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয় বায়ুদূষণে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার স্কোর ছিল ৩৪১ মানকেদুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দূষণের ঢাকায় নিশ্বাস নেওয়া দিনে ২৩ টি সিগারেট খাওয়ার সমান

অর্থা ঢাকার অবস্থা খুবই শোচনীয় এই বায়ু যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর জানা যায়, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম .-এর উপস্থিতি বুধবার ঢাকার শহরের বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি ছিল পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উদ্ভিদ প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে তাই পরিবেশ মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র কিন্তু পরিবেশ দূষণের মাত্রা প্রকট হওয়ার কারণে মানবসভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ

পরিবেশের উপাদানের মধ্যে রয়েছে গাছপালা, ঘরবাড়ি, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত এবং আরো অনেক কিছু এসব উপাদান মানুষ অন্যান্য জীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশ  অত্যন্ত প্রয়োজন এগুলোর ক্ষতি হলে ভারসাম্য নষ্ট হয়    

প্রাকৃতিক মানবসৃষ্ট উভয় পরিবেশের সমন্বয়েই সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের পরিবেশ মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে পাদিত ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন- গ্রিন হাউস গ্যাস, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, আগাছানাশক, ময়লা-আর্বজনা ইত্যাদি মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে 

¤প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরে শীতলতম স্থানের দিন-রাতের পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ডিগ্রি সেলসিয়াস আবার ঢাকার মধ্যেও পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন কেবলই বৈচিত্র্যতার অভাব, সময়মতো বৃষ্টির অভাব, অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে ¤প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ২০৬০ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে   

বর্তমানে আমরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি সেটা হল আমাদের গ্রহের বৃক্ষ  হারিয়ে যাওয়া আমাদের বন কেবল প্রজাতির আবাসস্থল নয়, তারা বায়ুমÐ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ মিকা পালন করে কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রতি বছর, কৃষি, লগিং এবং নগর উন্নয়নের জন্য বিশাল বনভমি পরিষ্কার করা হয়, যার ফলে বাসস্থানের ক্ষতি, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পাচ্ছে

বৃক্ষ নিধনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সেইসঙ্গে বন পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের অবশ্যই স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে জলাভমি, ম্যানগ্রোভ, তৃণভমি এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রগুলিও উল্লেখযোগ্য হুমকির সম্মুখীনে রয়েছে তাই জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন  পলিথিন, প্লাস্টিক রঙ তৈরির কারখানা থেকে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন গ্যাস নির্গত হয় গ্যাস বায়ুর ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে

ওজোন স্তর ছিদ্র হলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে প্রথমে ফাইটোপ্লাংটনসহ বিভিন্ন অণুজীব পরে উদ্ভিদ জগ প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতি করবে এতে ক্যান্সার বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে সমগ্র বিশ্বে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং শিল্পকারখানা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড (ঈঙ২) নির্গমণের কারণে বাতাসে গ্যাসের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে   

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্বিচারে সবুজ বৃক্ষ নিধন করার কারণে বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে এছাড়াও শিল্প-কারখানা, ইট ভাটা, বর্জ্য, গ্রিন হাউস গ্যাস ইত্যাদি দ্বারা বায়ু দূষিত হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা, খাল, বিল নদীতে পড়ে পানি দূিষত হচ্ছে ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে

পরিবেশ দূষণের আরেকটি বড় কারণ হলো বায়ু দূষণ  বাতাসে অক্সিজেন ব্যতীত অন্যান্য গ্যাস ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষিত হয় পৃথিবীর সব প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন গ্রহণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে অপর দিকে বৃক্ষরাজি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ অক্সিজেন ত্যাগ করে কিন্তু শিল্প-কারখানা, ইট ভাটা এবং মোটরযান হতে নির্গত- ধোঁয়া, বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা বায়ু দূষিত হচ্ছে মানুষের শ্বাস গ্রহণের সময় দূষিত বায়ু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করছে 

পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা, বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, খাল, বিল নদীতে পড়ে পানি দূিষত হচ্ছে ফলে ফুসফুস, পাকস্থলী ক্যান্সার লিউকোমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য, এসিড, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য নদীর পানির সাথে ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে মাটি দূষিত হচ্ছে

ঢাকার শব্দ দূষণের কথা না বললেই নয়  বাস-ট্রাক, রেলগাড়ি, হর্নের শব্দ, বিমানের বিকট শব্দ, শিল্পকারখানার শব্দ, মাইকের শব্দ, যানজট, জনসভায় মানুষের কোলাহলের শব্দ ঢাকার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ শব্দ দূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে বসবাস করতে হলে বিশেষ করে ঢাকায় দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন

সবাইকে পরিবেশ দূষিত করে এমন কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকতে হবে দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে আমরা নিজেরা বেশি করে গাছ লাগাবো আর অন্যকে গাছ লাগানোয় সাহিত করবো গাড়ির ক্ষতিকর ধোঁয়া বন্ধ রাখার চেষ্ঠা করা এবং অন্যকে ব্যাপারে সচেতন করা ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা এবং বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে নিস্কাশিত না করা শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালি ইত্যাদির বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই  

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

kutub

×