ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নদীর সংখ্যা

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৪৪, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

নদীর সংখ্যা

নদীবিধৌত বাংলাদেশে নদ-নদীর সঠিক সংখ্যা কত সেটি জানে না কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, যা দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রাথমিক কাজটির দায়দায়িত্ব প্রধানত বর্তায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাতে। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে কিছু উদ্যোগ যে নেওয়া হয়নি, তা নয়। তবে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থেকেই গেছে। অতীতে যাই হোক না কেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ বিষয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বলা হয়েছে যে, দেশে বর্তমানে নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৬টি। অবশ্য এটিও একটি খসড়া তালিকা। এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৮টি নদ-নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। তারও আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নদ-নদীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০৫টি। ফলে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। তবে আশার কথা এই যে, অন্তর্বর্তী সরকারের পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, আগামী বছরের পহেলা বৈশাখ নাগাদ দেশের নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এর পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা। যেমনÑ ইতোমধ্যে হাওড় ও বিলের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, পূর্ণাঙ্গ, যথাযথ ও সঠিক তালিকা ছাড়া কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজেই হাত দেওয়া যায় না। মৃত নদী বলে কিছু নেই, প্রবহহীন নদী বলা  যেতে পারে। কেননা, খনন করা হলে এতে নদীর প্রবহমানতা ফিরিয়ে আনার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোনো নদীকে মৃত ঘোষণা করা হলে সেটিকে জেলা প্রশাসক বা সংশ্লিষ্টরা লিজ দিয়ে দেন স্থানীয় পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য। এর ফলে একদিকে যেমন দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি হয়, অন্যদিকে তথাকথিত মৃত নদীটির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকে না। এর পাশাপাশি বর্তমানে আরও একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেটি     প্রশংসনীয়। দেশের প্রতিটি জেলার অন্তত একটি নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার কাজ অচিরেই শুরু হচ্ছে। দখল-দূষণে জর্জরিত এবং মৃতপ্রায় নদ-নদী উদ্ধার ও বাঁচানোর একমাত্র পথ এটিই। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার চারপাশে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যাকে দূষণমুক্ত করার জন্য বিস্তারিত একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকার প্রায় হারিয়ে যাওয়া ২২টি খাল দখল-দূষণমুক্ত করে একটি ব্লু নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও প্রায় চূড়ান্ত। যত দ্রুত এসব বাস্তবায়ন করা যায়, দেশের জন্য ততই মঙ্গল।
২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, নদীর সঠিক সংখ্যা ঠিক করার দায়িত্ব জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের। সারাদেশের নদ-নদীর অভিভাবক তারা। সেক্ষেত্রে নদীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের দায়িত্বও তাদের। এই রায়ে আদালত সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, কোনো নদ-নদী অবৈধ দখল ও দূষিত করা যাবে না কোনো অবস্থাতেই। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত বলেন, আগে নদীর সঠিক ও যথার্থ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আবশ্যক। কেননা, বরিশাল এলাকায় যেটি খাল, উত্তরবঙ্গে তা নদীর সমান। পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে অনেক ছড়া আছে, যাতে বর্ষাকালে পানি থাকে। অন্যসময় সেসব শুকিয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে কোন্্টিকে নদী বলা হবে, আর কোন্্টিকে নয়, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে সর্বসম্মত উপায়ে। তা না হলে ভুল ও বিভ্রান্তি থেকেই যাবে। এর জরুরি অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয় অবশ্যই।

মোহাম্মদ আলী

×