ফজল মুহাম্মদ
পলাশীর ময়দানে দেশীয় সেনাপতি মীর জাফরের গাদ্দারীর ফসল ছিল বাংলা, বিহার আর উড়িষ্যার স্বাধীনতার পতন। এরপরের ইতিহাস; ইতিহাসের ছাত্র বা পাঠক হিসেবে আমরা জানি। আমাদের এই বাংলা এতই সমৃদ্ধশালী ছিল যে, নামজাদা বিশ্ব পর্যটক সম্রাট ইবনে বতুতা এই বাংলাকে খেতাব দিয়েছেন; দোজখ ই পুর নিয়ামত। ইবনে বতুতা সুলতানী বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও সফর করেছেন। উনি এই বিষয়ে অনেক লিখেছেন। এটা ইতিহাসের অন্য অধ্যায়। আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু কলোনিয়াল বা উপনেবেশিক শোসকদলের রেখে যাওয়া কলোনিয়াল আইন। পেশাগত কারণে আমি পাঁচটি মহাদেশের ৫০ টি দেশ সফর করেছি। এমনকি কোন একটি আরব দেশ ৩০ বারের অধিক সফর করেছি। ইউরোপের আর উত্তর আমেরিকার দেশ, দক্ষিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ ঘুরে ফিরে দেখেছি। বিগত দুই হাজার সালের ২১ জুন থেকে কানাডাতে বসবাস করতেছি।
আমি জি-৭ তারকা রাষ্ট্র কানাডাতে আছি এই দেশটিও বৃটিশ কলোনি ছিল। বৃটেনের আইনে কানাডা সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। কানাডার আমলা তন্ত্র, পুলিশ প্রশাসন এবং বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল, গণ পরিবহণ, বিচার ও আদালত ব্যবস্থা, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি ইত্যাদি যত সরকারি বা আধা সরকারি সংস্থা আছে সেখানে শত ভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত রয়েছে। আর সরকারী বা বেসরকারী খাতে কোন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই বললেই চলে। তবুও যদি কারো বিরুদ্ধে কখনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠে ঐ ব্যক্তি সাথে সাথে ইস্তফা করে ফেলে। পক্ষান্তরে বৃটেনের ঐ একই আইনে পরিচালিত আমাদের হিমালয়ান উপমহাদেশে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে লুটপাট আর দুর্নীতি মহা ধুমধামে চলছে তো চলছেই ।
আমাদের আমলা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী সহ বিভিন্ন সরকারি বা আধা সরকারি অথবা বিভিন্ন দপ্তরের কর্তৃপক্ষ কেন জনগণের বন্ধু হতে পারছে না । এখানে দুর্নীতি এখন একটা মহাজন্জাল। আমাদের যারা সমাজ বিজ্ঞানী পন্ডিত বাহিনী আছেন উনারা গবেষণা করে দেখুন ; বৃটেনের আইনে পরিচালিত কানাডা এখন উন্নত সাত রাষ্ট্রের একটি। আর অন্যদিকে বাংলাদেশেও বৃটেনের আইন চলেছে অথচ এই বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই । জবাবদিহিতা নেই। ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়াচড়া করে না । আমি মনে করি এবং কায়মনে বিশ্বাস করি বৃটেনের আইনে আমাদের হিমালয়ান উপমহাদেশের দেশগুলোতে যে শাষণ চলেছে এখানে কলোনিয়াল মাষ্টারদের রেখে যাওয়া ভাগ করো এবং শাসণের নামে শোষণ করার কালো নীতি অব্যাহত আছে। কানাডার একজন আমলা জবাবদিহিতার বাধ্য বাধকতার কারণে দুর্নীতি করতে পারে না । পুলিশ ঐ একই কারণে ঘুষ খেতে পারে না । রাজনৈতিক দলের নেতারা অবৈধ ভাবে টেন্ডার বা বাণিজ্যিক লুটপাট করতে পারে না । অথচ আমাদের হিমালয়ান উপমহাদেশে এখন আমলা তান্ত্রিক আর পুলিশি ঘুষ বাণিজ্যিক মহড়া দেদার চলেছে । আমরা ১৯৪৭ সালে বৃটিশ বেনিয়াদের বিতাড়িত করেছি। ১৯৭১ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। অথচ এখন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের মানুষ শোসণ থেকে মুক্তি পায়নি। জুলাই ৩৬ বিপ্লব ২০২৪ আমাদের তরুণ বাহিনী ভারতীয় তাবেদার ফেসিস্ট সরকারের মসনদ উপড়ে ফেলেছে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা,নৌ, বিমান বাহিনী ছাত্র যুব সমাজের বিপ্লব শরীক হয়েছে । আমরা সবাই চাই এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বৃটেনের কলোনিয়াল আইনের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে । আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মের বিধানে সাম্য ও সম্প্রীতির আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকেই কাজ করতে হবে । কোন অবস্থাতেই জুলাই ৩৬ বিপ্লব ২০২৪ কে বেহাত হতে দেওয়া যাবে না।