ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শীতের তীব্রতায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ

মো: মুজাহিদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

শীতের তীব্রতায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ

শীতের প্রকোপ বাড়ছে। শীতে প্রকৃতিতে দিনব্যাপী বিরাজমান বৈরী ও শুষ্ক আবহাওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টিতে একটি প্রকট সমস্যা। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনে নতুন সংগ্রামের শুরু হয়। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বিভিন্ন সড়ক, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, পার্ক ও ফুটপাতে বসবাসরত অগণিত মানুষ শীতকালীন সমস্যা ও অনাহারে জীবনযাপন করেন।
শীতের তীব্রতা রাতে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।
শীতে সাধারণত  ঠাণ্ডা, বৃষ্টি বা কুয়াশার মধ্যে ছিন্নমূল মানুষদের কোনো নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় তাদের শারীরিক অবস্থায় প্রভাব পরে। নিম্নমানের জীবনযাপনের কারণে গরম কাপড়ের অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অনেকে রোগাক্রান্ত হন। শীতের কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, এবং অন্যান্য শীতজনিত রোগ ছিন্নমূল মানুষদের উপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে।
শীতের বৈরী আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে ছিন্নমূল মানুষের দৈনন্দিন জীবিকায়। সারাদিন সূর্যের দেখা না মেলা, প্রকৃতিতে চলতে থাকা শীতের তীব্র দাপটে ছিন্নমূল মানুষের দৈনন্দিন আয় স্থবির হয়ে পরে। ফলে ছিন্নমূল পরিবারগুলোতে পর্যাপ্ত খাবারের সংকট তৈরি হয়। একদিকে শীতের তীব্রতার কষ্ট, অন্যদিকে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব সবমিলিয়ে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

ছিন্নমূল পর্যায়ে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অভাবে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। ফলে তীব্র ঠান্ডা এবং খাদ্যের অভাবে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং তারা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জনশুমারি ও গৃহ গণনা-২০২২–এর তথ্যমতে, সারা দেশে ২২ হাজার ১১৯ জন ছিন্নমূল বা গৃহহীন মানুষ রয়েছে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্যমতে, শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ৫০ হাজার ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। অপর দিকে বিভিন্ন সংস্থার মতে, সারা দেশে শুধু পথশিশুর সংখ্যাই ১০ থেকে ১৫ লাখ।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পর্যালোচনা-২০২১' শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বর্তমানে শীতের তীব্রতায় ছিন্নমূল মানুষদের জন্য  সরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণ, আশ্রয় কেন্দ্র ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতেও শীতজনিত রোগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
স্থানীয় কমিউনিটি এবং সমাজকর্মীরা যদি একত্রিত হয়ে ছিন্নমূল মানুষের জন্য আশ্রয়, গরম কাপড় এবং খাবার সরবরাহ করে, তবে ছিন্নমূল মানুষদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা সহনীয় হতে পারে। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা , যেখানে ছিন্নমূল মানুষের জন্য গরম কাপড়, কম্বল এবং খাবার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, অন্যদিকে শীতজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে ছিন্নমূল মানুষেরা রক্ষা পাবে।
শীতকালীন মৌসুমে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ এক গভীর সামাজিক সমস্যা, যা সমাধানের জন্য সরকারি, বেসরকারি এবং সামাজিকভাবে সহযোগিতা এবং সচেতনতার প্রয়োজন। ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী যদি শীত মৌসুমে প্রয়োজনীয় সাহায্য পায়, তবে শীতের তীব্রতার মধ্যেও তাদের জীবন নিরাপদ ও সুরক্ষিত হবে।
সম্মান প্রথম বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ ও সহযোগী সদস্য রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।

 

×