ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দেশের উন্নয়নে আইসিটি’র ব্যবহার বাড়াতে হবে

মো. জাহিদ হাসান

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের উন্নয়নে আইসিটি’র ব্যবহার বাড়াতে হবে

সভ্যতার ক্রমবর্ধমান উন্নতিকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।আইসিটি আমাদের দৈনন্দিন প্রায় প্রতিটি কাজকে সহজ ও গতিশীল করেছে। এটি যেকোন কাজে মানুষের অর্থব্যয় কমিয়েছে। নানা উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে এর ফলে। আইসিটি'র মাধ্যমে মানুষ অজানাকে জেনেছে এবং জানছে। ফলে মানব সমাজে ঘটছে আরও আধুনিকায়ন।

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আইসিটি'র উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। পশ্চিমা দেশগুলো আইসিটি'র সমৃদ্ধির কারণেই এতো বেশি উন্নত। সেদিক থেকে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ মানুষ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৫২ শতাংশ।

হারটি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ ব্যবহার করেছে ৪.৬৯ শতাংশ মানুষ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৪.২৬ শতাংশ। ইন্টারনেট স্পিড একটি দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের অন্যতম মানদন্ড। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের ইন্টারনেট স্পিড অনেক কম।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের  ইন্টারনেটে ২৩ শতাংশ গড় ডাউনলোড স্পিড নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৫ তম। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সেসময় ৬২.৯৪ শতাংশ ডাউনলোড স্পিড নিয়ে ১৮ তম অবস্থানে ছিল। এর মধ্যে আবার আমাদের দেশে আইসিটি'র অপব্যবহারও হয় অনেকাংশে। দেশের অধিকাংশ মানুষই অধিক হারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিনোদনের জন্য।

এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে শিশুদের মেধা বিকাশে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যদিও বর্তমানে দেশের ক্রমাগত উন্নয়নে আইসিটি আমূল পরিবর্তন এনেছে, কিন্তু উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের দেশের গঠনমূলক অংশগুলোতে এবং চালিকাশক্তির উন্নয়নে আইসিটি'র যথাযথ ব্যবহার অনেক বেশি বাড়াতে হবে।
বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি'র যথাযথ ব্যবহার নেই। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব ইত্যাদি খুব কম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আছে। দারিদ্র্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়েও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পারসোনাল কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পায় না।

ফলে অনুশীলন না করতে পারায় শুধু বই পড়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইসিটি'র ব্যবহার সম্বন্ধে উপযুক্ত জ্ঞান লাভ করা এবং পড়ালেখায় এটির ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। দেশের বেশিরভাগ চিকিৎসাকেন্দ্রে ডিজিটাল চিকিৎসাসেবায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে ডিজিটালাইজেশনের ঘাটতি, কম্পিউটার ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ না থাকা ইত্যাদি কারণে দেশের অনেক হাসপাতালে সুচিকিৎসা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

হাসপাতালে রোগীর সম্পুর্ণ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কম্পিউটারের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারের সরবরাহ বৃদ্ধি সহ সকল চিকিৎসা কর্মীদের আইসিটি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমাদের দেশের কৃষকদের আইসিটি সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান না থাকায় আধুনিক কৃষি উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

কম্পিউটারের ব্যবহার না জানায় এদেশের সাধারণ কৃষকেরা ই-কৃষি তথ্য, ই-বাজার, আবহাওয়া পূর্ভাভাস ইত্যাদি বিভিন্ন সেবা নিতে অসমর্থ হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও সুযোগ না থাকায় আমাদের দেশের কৃষকেরা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছে না।  এজন্য সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং সহায়তা দিয়ে কৃষিতে আইসিটি ব্যবহারের চর্চা শুরু করতে হবে।

দেশের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রগুলোতেও আইসিটি'র পর্যাপ্ত ব্যবহার নেই। কৃষিভিত্তিক এই দেশে কৃষির সর্বোচ্চ উন্নয়নের লক্ষ্যে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আইসিটির পূর্ণ ব্যবহার না থাকায় পরিবহন ভাড়া নিয়ে দূর্ণীতি ও যাত্রী ভোগান্তির অন্ত নেই। এছাড়া ট্রাফিক কন্ট্রোলিং, পরিবহনের যন্ত্রাংশ ও ড্রাইভিং সিস্টেমে আধুনিকায়ন না হওয়ায় দেশে সড়ক দূর্ঘটনা কমছে না। বর্তমানে ই-কমার্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আইসিটি জ্ঞান সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরি হলে ই-কমার্সে বাংলাদেশ আরও বেশি এগিয়ে যাবে। এছাড়া ডিজিটালাইজেশনের যুগে মানুষের অর্থনৈতিক আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত আউটসোর্সিং। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যমতে, ফ্রিল্যান্সিং - এ ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯ তম।

এ হার সত্যি লজ্জাজনক। বর্তমানে ই-কমার্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আইসিটি জ্ঞান সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরি হলে ই-কমার্সে বাংলাদেশে আরও বহুগুণে এগিয়ে যাবে। আইসিটি'র পূর্ণ ব্যবহার শুরু না হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি কাজে স্পষ্টতা নেই এবং দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে ও সামরিক ক্ষেত্রে আইসিটি'র খুব বেশি প্রাচুর্য নেই।

আমাদের দেশের ব্যংক, ব্যবসা ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু আইসিটি'র জ্ঞান না থাকায় অনেক মানুষ এখনও ঠিকভাবে ইলেকট্রনিক সেবাসমূহ নিতে পারছে না।
ব্যয়বহুল হওয়ায় হয়তো দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইসিটি যন্ত্রপাতির সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। কিন্তু যতটুকু আইসিটি'র ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব, আইসিটি জ্ঞান সমৃদ্ধ জনশক্তি না থাকার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সবার আগে দেশের সর্বস্তরে আইসিটি'র শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও সাধারণ মানুষকে নানাভাবে আইসিটি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি উদ্যোগে গ্রাম পর্যায়েও আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এর সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইসিটি যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও এর যথাযথ ব্যাবহার শুরু করতে হবে। দেশের নাগরিকদের দক্ষ ও আধুনিক করে তুলতে এবং সামগ্রিক উন্নয়নে আইসিটি'র ব্যবহার বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ই-মেইল: ুধযরফ৯ী৯@মসধরষ

kutub

×