দেশের স্বার্থে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগীরাÑ জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। কেননা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকার আমদানি পর্যায়ে কর অব্যাহতি দিলেও মেলেনি প্রত্যাশিত ফল। অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন রমজান উপলক্ষে চাল, তেল, ডিম, পেঁয়াজসহ ১১টি নিত্যপণ্যের আমদানিতে দিয়েছে কর অব্যাহতি। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। স্থিতিশীলতা ফিরে এলে শুল্ক আবার আগের স্তরে আসবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে ভোজ্যতেলের আমদানি মূল্য। এতে প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা বাড়ার কথা থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। তাই নতুন দাম কার্যকর করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার বিকল্প নেই।
বরাবরই রোজার তিন-চার মাস আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে শুরু হয় কারসাজি। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমছে না সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারসাজি। আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব চক্র। প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অন্তর্বর্তী সরকার শুল্ক ও কর ছাড়ের মতো অনেক পদক্ষেপ নিলেও সেই সুবিধা লুফে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট চক্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতবদল হয়েছে। পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন।
মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য বড় যানবাহন ঢাকায় ঢুকলেই একাধিক স্থানে দিতে হয় চাঁদা। ঢাকায় আসার পরও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় মূল বাজারে। প্রতিটি স্থানে চাঁদার পরিমাণ থাকে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা। পণ্যের উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায়ে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন হাত বদলে দাম বাড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সমাজ থেকে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা আশা করেছেন এবং চাঁদাবাজদের রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই উদ্যোগ যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। পণ্যমূল্য ক্রেতা সাধারণের নাগালেন মধ্যে আনতে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। এরপরও সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য কমছে না। একদিকে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র, অন্যদিকে চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে জনগণের পকেট কাটছে। অন্যদিকে চাঁদাবাজরা পরিশ্রম ছাড়াই হচ্ছে কোটিপতি। যেভাবেই হোক এই অপসংস্কৃতি থেকে দেশকে বেড়িয়ে আসতে হবে। বাজারে অস্থিরতা কমাতে প্রয়োজনে সমবায় পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং সক্রিয় করতে হবে টাস্কফোর্স। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
মোহাম্মদ আলী