ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে গত কয়েক বছর অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হলেও অধিকাংশই এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে, ছোট বড় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আবেদনের পরও পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পরীক্ষা আয়োজনের সক্ষমতা নেই, তারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে। ফলে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরই বেড়েছে দুশ্চিন্তা। কেননা, এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও যাতায়াত, হোটেল ভাড়া ও খাবারসহ নানা ধরনের খরচ রয়েছে। এবার অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ফি হাজার টাকা বা তারও বেশি। ফলে, সারাদেশে যে অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এগুলোর মধ্যে অন্তত ২০টি ভার্সিটিতে পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন ফি বাবদ লাগছে অন্তত ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে যাতায়াত খরচ। প্রতি পরীক্ষার জন্য অন্তত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে যাদের আবাসনের কোনো সুব্যবস্থা নেই, তাদের থাকতে হবে হোটেলে। খেতে হবে নিজ খরচায়। অর্থাৎ শুধু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতেই অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারে লাখ টাকা খরচ হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই খরচ প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ বেশি হতে পারে। কারণ, সাধারণত তাদের সঙ্গে একজন অভিভাবকও থাকেন।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি বিসিএসসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় নামমাত্র আবেদন ফি ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকারের কাছে ন্যূনতম আবেদন ফি নির্ধারণের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা। এমতাবস্থায় সরকার যদি গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে নাও পারে, অন্তত আবেদন ফির লাগাম টানতে পারে। এতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে।
এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন ভর্তিযুদ্ধ। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে শধু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল থাকলেই চলে না, ভর্তি পরীক্ষায়ও ভালো করতে হয়। সেক্ষেত্রে মানসিক চাপও বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি এবার ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের সেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। যদি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকলে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমতে পারে। একই সঙ্গে আবেদনের নামে বাড়তি খরচসহ ভোগান্তিও সমর্থনযোগ্য নয়। এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা কাম্য।

মোহাম্মদ আলী

×