বৈবাহিক চুক্তি বা বন্ধনের ভাঙন বা সামাজিকভাবে স্বীকৃত সম্পর্কের পরিসমাপ্তিই হলো বিবাহ বিচ্ছেদ। সকল ধর্মেই বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন বলা হয়েছে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে শুধু দুইজন ব্যক্তিই নয়, বরং বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন গড়ে ওঠে এবং সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বিবাহের মাধ্যমে দুজন নারী-পুরুষ একে অপরকে ভালোভাবে জানতে পারে, বুঝতে পারে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিবাহ যেমন সহজ, বিবাহ বিচ্ছেদও তার থেকে বেশি সহজ। দুজনের বোঝাপড়ার একটু কমতি হলেই তারা সহজেই বিচ্ছেদের স্বীদ্ধান্ত নেয়।
বিচ্ছেদের নানাবিধ কারণ রয়েছে। কম বয়সে বিবাহ, বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। বয়স কম থাকায় স্ত্রী, স্বামী এবং শশুরবাড়িতে উপযোজনে ব্যর্থ হয়। দিনে দিনে শশুরবাড়ির সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করে না। এই অবিশ্বাস থেকে সন্দেহ, লুকোচুরি শুরু হয়, পরবর্তীতে যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কন্যা সন্তান হবার ফলেও অনেক নারীকে শশুরবাড়ি কর্তৃক নির্যাতিত হতে হয়। এছাড়া বন্ধ্যাত্ব সমস্যা তো রয়েছেই। স্বামী যদি তার স্ত্রীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। বিবাহ পরবর্তী স্বামীর সাথে উপযোজনে ব্যর্থ হলে সেটিও প্রভাব ফেলে।
বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম একটি কারণ হলো ভিন্ন সামাজিক অবস্থা। অতি উচ্চ বংশের ছেলের সাথে নিচু বংশের মেয়ে কিংবা অতি উচ্চ বংশের মেয়ের সাথে নিচু বংশের ছেলের বিবাহ হলে পরবর্তীতে তাদের মানিয়ে চলতে অসুবিধা হয়। ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিবাহও, বিচ্ছেদের কারণ। বর্তমানে নারীদের পেশায় নিয়োজিত হওয়া অনেক পুরুষই পছন্দ করেন না। তা সত্তে¡ও নারীরা যদি ঘরের বাইরে কাজ করে সেক্ষেত্রে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়৷
পরিবার হলো সমাজের সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক। আর পারিবারিক বন্ধন হলো পারিবারিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। বিচ্ছেদের মাধ্যমে পরিবার ভেঙে যাওয়ায় সামাজিক বন্ধন দূর্বল হয়ে পরছে। পরিবার ভাঙনের ফলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পরে নাবালক শিশুরা। আমাদের দেশে বিয়ের ৭/৮ বছরের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে তাদের সন্তান থাকে নাবালক। পিতা-মাতার আলাদা হয়ে যাওয়া সন্তানের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। পিতা-মাতার বিচ্ছেদ সন্তানদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য একটি পরিবার বা পারিবারিক বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা পরিবার থেকেই শিশুরা বিভিন্ন নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। বিচ্ছেদের পর স্বামী স্ত্রী বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়। বিশেষ করে বিচ্ছেদের পর নারীদেরকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধন ভাঙতে অস্থির হওয়াটা কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে পরস্পরকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে,সহমর্মিতা দেখাতে হবে। আধুনিক শিল্প-সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি। আমরা বিয়ে করতে পছন্দ করি,এমনকি করিও। তারপরও আমাদের সমাজে বিচ্ছেদের হার বেশি। মনে রাখতে হবে,বিচ্ছেদ কোনো সমাধান নয়। তাই একটি সুন্দর সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিবাহ বিচ্ছেদকে রুখতে হবে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ