দেশের শিক্ষকরা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত এবং অসম্মানিত কেন? অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক সমাজকে পদে পদে অপমানিত হতে দেখছি। অথচ এই শিক্ষক সমাজ মানুষ করার কারিগড়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সম্মান মাটিতে লুটাতে দেখে নিজের কাছে ভীষণ কষ্ট লেগেছে। ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে শিক্ষক সমাজের প্রতি যে লংকাকান্ড হতে দেখেছি তাতে সমাজের প্রতি দেশের মানুষের ক্ষোভ ছিল লক্ষনীয়। অথচ এই শিক্ষকরাই মূলতঃ মানুষ গড়ার মূল কারিগড়। তারাই সমাজে মূল্যবোধ শিখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষতের পথ দেখিয়ে থাকেন।
তাই শিশু মনে শিক্ষকদের সর্ম্পকে যে শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গাটা তৈরী হয়ে থাকে, তা সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই সম্মানের জায়গাটা অক্ষুন্ন রাখার দায়িত্ব শিক্ষকদেরও বটে। আগের দিনে দেখেছি শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের যে সম্মান শ্রদ্ধাটা ছিল যা এখন আর দেখা যায় না। পিতা- মাতার পর শিক্ষকদের স্থান। শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষিত সমাজের যে অবদান তা কোন অংশে খাটো করে দেখা ঠিক নয়। অনেক শিক্ষক তাদের মেধার জোরে যে শিক্ষকতা করেন সেটাই তার পেশা ও নেশা। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের খুব যতœ নিয়ে বিদ্যা অর্জনে চেষ্টা চালিয়ে যান। আর সেই শিক্ষক সমাজকে সম্মানহানি চেষ্টাকরা হয় যা কোনভাবেই কাম্য নয়। মনে রাখা উচিৎ শিক্ষকতা পেশাটার প্রতি সকলের সম্মান রয়েছে।
কথায় কথায় শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড বলা হলেও শিক্ষকদের মেরুদন্ড বর্তমানে একবারে নড়বড়ে। অভাব- অনটন শিক্ষকদের নিত্য সঙ্গী। সমাজে অবহেলিত শিক্ষকদের শুধু মূল্যায়ন নয়, যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নেই। ঘন ঘন পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক তৈরী হয়ে থাকে একটি নীতিমালার ভিওিতে। আমাদের দেশে এর কোন বালাই নেই। শুধু শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষকরা নাজেহাল হচ্ছে তা নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির দ্বারাও তারা লাঞ্ছিত হয়ে থাকেন। দেশে এখন প্রবীণ ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব। মূলতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, বা স্থানীয় রাজনীতিবিদ বা এক শ্রেণীর উঠতি নেতাদের দখলে। অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই সমাজে আজ শিক্ষকদের মান-মর্যাদা তলানিতে প্রায়।
যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর বাস্তবতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত দেশের অধিকাংশ শিক্ষক সমাজ। তাহলে দেশের জন্যই শিক্ষকরা জাতিকে কতটা আলোর মুখ দেখাবেন? এক সময় আমাদের দেশের শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন ছিল যা এখন আর দেখা যায় না। অথচ এই শিক্ষকরাই জ্ঞানঅর্জনের পেছনে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখান, অনুপ্রেরণা যোগান। আর এই শিক্ষক সমাজের উপর এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ যা সমাজের জন্য দুঃখজনক। শিক্ষকরা এক সময় অভিভাবক তুল্য আচরণ করেন ঠিকই আবার অনেক সময় বন্ধুসুলভ হয়ে থাকেন। দেশে সংস্কৃতির হাজার বছর ধরে ছাত্র শিক্ষকের পারিবারিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক চলে আসছে যা কখনো নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। তবে শিক্ষকদের মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষকরাই তো প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি, পরিছন্নতা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক মান মর্যাদা, নিরাপত্তা, আচার ব্যবহার, আদব কায়দা, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান সবকিছু শিখিয়ে থাকেন। লক্ষ্য রাখতে হবে কোন অবৈধ আইনি শিক্ষক সমাজের শিক্ষার মুক্ত পরিবেশকে অবরুদ্ধ না করে। শিক্ষকরা গড়তে পারে আগামী দিনের শিক্ষিত সমাজ। তাই শিক্ষক সমাজকে আর কোনোভাবেই অপমানিত বা হেনস্তা না করে বরং দেশে আরো আদর্শবান শিক্ষক তৈরিতে চেষ্টা করি আর ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক মধুর হউক সে প্রচেষ্টায় ছাত্র শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের ভ‚মিকা কে স্বাগত জানাই।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী