রাজধানীর বাজার থেকে গত ১ সপ্তাহ যাবৎ উধাও হয়ে গেছে বিশেষ করে ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। সে অবস্থায় ঢাকার বাইরের খবর সহজেই অনুমেয়। মূলত পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি বৈ ভিন্ন কিছু নয়। আমদানিকৃত অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেটের বিষয়টিও সুবিদিত। উল্লেখ্য, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি বিদেশ থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে থাকে। শীতকালে পাম তেল জমে যায় বলে এক্ষেত্রে কিছু তেলেসমাতির অভিযোগও আছে। অর্থাৎ ভেজাল মেশানো। বিশুদ্ধ সয়াবিন তেল পাওয়াও দুষ্কর। যে কারণে ক্রেতা সাধারণ খুচরা সয়াবিন বা পাম তেলের পরিবর্তে কিছুটা বেশি আস্থা রাখেন বোতলজাত সয়াবিন তেলের ওপর। তো সেই বোতলজাত সয়াবিন তেল আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার পর্যবেক্ষকদের অভিমত, মূলত রোজা সামনে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির এই অশুভ পাঁয়তারা। প্রতিবছরই রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী এই অপকর্মটি করে থাকেন। আর তাদের কাছে সরকার প্রায় অসহায় এবং ক্রেতাসাধারণ জিম্মি।
গত কয়েক মাস ধরে সয়াবিন-পাম তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫ ডলারের বেশি, যা গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রতিটনে ৫০ ডলারের বেশি। আর তাতেই যেন ব্যবসায়ীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তারা বাজার থেকে উধাও করে দিয়েছেন বোতলজাত সয়াবিন তেল। অথচ সরকার দুই দফায় প্রথমে ১৭ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর ভোজ্যতেলের শুল্ককর কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ করেছে। ফলে প্রতিকেজি অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ককর কমেছে ১০-১১টাকা। বাস্তবে বাজারে এর আদৌ কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। পরিবর্তে দাম আরও বাড়ানোর ফন্দিফিকিরে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের আমদানি অন্তত ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। এবার এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন।
শুল্ক কমানোর পরও ভোজ্যতেলের আমদানি কেন কমেছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তারা এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। যা হোক, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন বর্তমানে ভোজ্যতেলের চাহিদা, মজুত ও আন্তর্জাতিক বাজার দর পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন দেবে। তার পরেই নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সেজন্য চাহিদা অনুযায়ী তেল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ঋণপত্র বা এলসি খুলতে হবে এখনই। তা না হলে আগামীতে ভোজ্যতেলের বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।