ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

বিষময় বায়ু ॥ সুরক্ষার সুপারিশ

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিষময় বায়ু ॥ সুরক্ষার সুপারিশ

গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছিল বিশে^র ১২৬টি বড় শহরের মধ্যে সবচেয়ে বায়ুদূষণের শহর। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে এই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ২৫৯। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই মান খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দিন বিশ্বে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল মিসরের রাজধানী কায়রো ও ইরাকের বাগদাদ। এই দুই শহরের স্কোর যথাক্রমে ২৪১ ও ১৮৯। শুধু বুধবারই নয়, পরপর তিন দিন ঢাকা ছিল বিশে^র সবচেয়ে বায়ুদূষণের নগরী। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। সে অনুযায়ী ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর এবং যে  কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আইকিউএয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী বুধবার ঢাকা ও এর আশপাশের তিন স্থানের দূষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এগুলো হচ্ছে ইস্টার্ন হাউজিং ২, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এবং গুলশান-২ এলাকার রব ভবন। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি। ভৌগোলিক কারণে প্রতিবছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শুরুতেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রায়ই ঢাকার বায়ুদূষণ স্কোর বিশে^র শহরগুলোর মধ্যে এক নম্বরে চলে আসছে। সূচকে গত দুই মাসে ঢাকা একাধিকবার ৩০০ এর বেশি স্কোর নিয়ে সর্বোচ্চ দূষিতের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী স্কোর শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত হলে তা স্বাস্থ্যকর বায়ু, ৫০ থেকে একশ’ পর্যন্ত মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য, ১০১ থেকে ১৫০ বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্ব¡া মহিলাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০ এর ওপরে হলে খুবই ঝুঁকি ও দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী দূষিত শহর হিসেবে আলোচিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের তৎক্ষণাৎ বা দ্রুত মৃত্যু হয় না। এটি এক ধরনের নীরব ঘাতক। মানুষের মৃত্যুর ১০টি কারণের মধ্যে পঞ্চম হচ্ছে বায়ুদূষণ। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি বায়ুদূষণই দায়ী। বায়ুদূষণের কারণে বিশে^র ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যাচ্ছে। যার করণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে।
আমাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদি বায়ুদূষণের কারণে স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে ক্যান্সার এবং ফুসফুসের রোগে বছরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের (আইএইচএমই) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণযুক্ত পরিবেশে কোনো শিশু বেড়ে উঠলে তার গড় আয়ু ৩০ মাস (২ দশমিক ৫ বছর) পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত এলাকা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। মৃত্যু ঝুঁকির অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ অধিকতর দায়ী। বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২ দশমিক ৫ (২.৫ মাইক্রোমিটার বা তার চেয়ে ছোট ব্যাসের বস্তুকণা)। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৯০ সাল থেকে পিএম ২ দশমিক ৫ মাত্রার মধ্যে বসবাস করছে। বায়ুদূষণের কারণে দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়।
বাংলাদেশের মাটির প্রকৃতির কারণে বাতাসে বরাবরই ধুলাবালি ছিল বেশি। ধুলাবালি থাকলেও কয়েক দশক আগে বাতাস মানুষের জন্য এতটা ক্ষতিকর ছিল না। যান্ত্রিক যুগে নানা ধরনের যৌগিক পদার্থের উপস্থিতিতে এখন বাতাস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। আগের রেকর্ড ভেঙে বারবার দূষণের তালিকায় ঢাকা শীর্ষে চলে আসার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ উঠে এসেছে বিবিসির এক রিপোর্টে। এতে বলা হয়, যেসব কারণে ঢাকার বায়ুদূষণ কমছে না এর মধ্যে রয়েছে নির্মাণ কাজ, ইটভাঁটি, শিল্প-কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বর্জ্য পোড়ানো, ট্রান্স-বাউন্ডারি এয়ার পলিউশন ইত্যাদি। রাজধানীতে সারাবছরই ছোট-বড় অজস্র ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে কিছু বড় প্রকল্প। যে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজে বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও এগুলো মানা হয় না। নির্মাণ কাজে ধুলাবালি প্রতিরোধে অস্থায়ী বেষ্টনী দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা এবং দিনে কমপক্ষে দুবার স্প্রে করে পানি ছিটানোর কথা বলা হয়েছে। নির্মাণাধীন রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার এবং  দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করার কথা। কেউ এই নিয়ম পালন না করলে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব নিয়ম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা সিটি করপোরেশনের। বাস্তবে নিয়মিত পানি ছিটানো হয় খুবই কম।
দূষণবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকার আশপাশে রয়েছে প্রায় ১২শ’ ইটভাঁটি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইটভাঁটি এখন সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কয়লা বা কাঠ। ইটভাঁটিতে প্রচুর ছাই তৈরি হয় এবং নির্গত ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত কণা বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। এই ইটের ভাঁটিগুলো সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে চলমান থাকে। এই সময় কয়লা বা কাঠ পোড়ানো থেকে নির্গত অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বায়ুদূষণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ বলবৎ রয়েছে। এই আইনের তেমন প্রয়োগ নেই। ২০১৯-২০২০ সালের দিকে অনুমোদনহীন ২০০-২৫০ ইটভাঁটি বন্ধ করা হয়েছিল। এখন আবার নতুন করে সেই ইটভাঁটিগুলো স্থাপিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশে রয়েছে ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা। এগুলো ঢাকার দূষণের অন্যতম কারণ।
রাজধানীতে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এসব যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে আচ্ছন্ন করে ফেলছে আশপাশের এলাকা। রংচটা লক্কড়-ঝক্কড় এই যানবাহন রাস্তায় বিকট শব্দে কিভাবে চলাচল করতে পারছে এই প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদের। সাধারণত একটা বাসের ইকোনমিক লাইফ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। উন্নত দেশগুলোতে ইকোনমিক লাইফ শেষ হওয়ার পর বাসগুলোকে সড়ক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে সেগুলো ঠিকভাবে জ্বালানি পোড়াতে পারে না। তখন ধোঁয়ার সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে সত্তর শতাংশেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ। এগুলো মেরামতেরও অযোগ্য। লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাফিক বিভাগ অদৃশ্য কারণে এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। মাঝে মধ্যে ঘোষণা দিয়ে চালানো হয় অভিযান। সীমিত সময়ের এই অভিযানের সময় ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন আত্মগোপনে চলে যায়। রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা গাড়ির পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ। এ সময় রাজধানীতে মারাত্মক পরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো পুরনো বাসের গায়ে নতুন করে রং লাগিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। অভিযান শেষ হলেই আবার সব বাসই ফিরে আসে। অকেজো লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো অপসারণ করে উপযুক্ত গাড়ি নামানোর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। ময়লার স্তূপ যেখানে থাকে, সেখানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীরা অনেক সময় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অনেক বাসাবাড়িতে বা মহল্লায় বর্জ্য  পোড়ানোকে  সেরা সমাধান হিসেবে ভাবা হয়। এই কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে এটি কারও মাথায় নেই। ট্রান্স-বাউন্ডারি এয়ার পলিউশনের কারণেও ঢাকার বায়ুদূষণ হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারতের দিল্লি, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন স্থানে ফসল সংগ্রহের পর খড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দীপাবলির উৎসবেও দিল্লির বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। এই সময় ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায় দিল্লি নগরী। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলাদেশের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়।  ট্রান্স-বাউন্ডারি ইফেক্ট হিসেবে ভারতের এই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এটিকে ‘রিজিওনাল এয়ার পলিউশন’ বলা হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর বায়ুদূষণ কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সংস্থার জন্য করণীয় ১১ দফা সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে প্রযুক্তনির্ভর ইটভাঁটি প্রতিষ্ঠা করা, নিয়মিত যানবাহনের কার্বন নিঃসরণ মাত্রা পরীক্ষা করে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ করা, দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার সময় বন্ধ রাখা গাড়ির ইঞ্জিন, শিল্প-কারখানায় মনিটরিং জোরদার করা, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু, সিমেন্ট, ইট ইত্যাদি পরিবহন ও মজুতের সময় ঢেকে রাখা, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পয়োনিষ্কাশন ও  টেলিফোন লাইন উন্নয়ন ও  মেরামত) সময় ধূলিদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পানি ছিটানো, সড়ক নির্মাণ ও  মেরামত এবং  সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় সাধন করা, রাস্তা  খোঁড়াখুঁড়ির সময় ওই স্থান যতটুকু সম্ভব ঢেকে রাখা ও দিনে একাধিকবার পানি ছিটানো, নিয়মিত রাস্তা পরিচ্ছন্ন ও ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, উন্মুক্ত স্থানে সবুজায়ন করা এবং আবর্জনা না পোড়ানো। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এবং ইট প্রস্তুতকারক সমিতি, বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, পরিবহন মালিক সমিতিকে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এই সুপারিশমালা খুবই সময়োপযোগী এবং বাস্তব। এই এগারো দফা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না? বিগত সরকারের আমলে পরিবহন খাত ছিল একটি মহলের হাতে জিম্মি। অনেক ক্ষেত্রে এরা ছিল সরকারের চেয়েও ক্ষমতাশালী। কথায় কথায় জিম্মি করা হতো সাধারণ যাত্রীদের। বর্তমান সরকারের আমলে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সময় এসেছে পরিববহন খাতকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে রাস্তা থেকে ক্ষতিকারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি অপসারণের। নির্মাণ ও মেরামত কাজে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ন সাধন অনেক পুরনো পরামর্শ। বিভিন্ন  সময় সিটি করপোরেশনের মেয়রগণ বারবার এমন তাগাদা দিয়েছেন। অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এ জন্য ‘মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের’ দাবি জানিয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিবারই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক, টকশোর বন্যা বয়ে যায়। আলোচনার ঝড় ওঠে। পাওয়া যায় সুপারিশমালা। দিন  শেষে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। এখন বায়ুদূষণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। আপাতত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আইকিউএয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘরের বাইরে  গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা ঠিক হবে না। যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে ঘরের জানালা।
লেখক :  নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×