ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অন্যান্য উন্নয়ন খাতের মতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও ব্যাপক লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে। এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সর্বত্র সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও সংস্কার জরুরি ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ খাতে মূল সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা (১২০ কোটি ডলার) সাশ্রয় হতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই পরিমাণ অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে ব্যয় করে থাকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনোমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিসের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। এতে বলা হয়েছে, শিল্প খাতে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা আছে তার অর্ধেক বর্তমানে ক্যাপটিভ জেনারেটরের (নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো) মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সেগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায়। এছাড়া ৩ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি যোগ করা যেতে পারে। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের তুলনায় লোডশেডিং ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে ক্ষতি ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এসব পদক্ষেপ নিলে সাশ্রয় হতে পারে ১৪ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে সরকার ১ লাখ ২৬ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
গবেষণা সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, ২০৩০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা হবে ২৫ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। জীবাশ্ম বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ রাখা, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলচালিত কেন্দ্রের ব্যবহার ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ৪৫০০ মেগাওয়াট জীবাশ্ব জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে রাখা হলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হবে ৩৫ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট। এ উৎপাদন সে বছরের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ২৫ হাজার ৮৩৪ পূরণে সহায়ক হবে। এর ফলে সার্বিকভাবে অর্থের সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে।
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। কৃষি নির্ভরতা থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে। শিল্প-কলকারখানার চাকা সচল রাখে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর প্রায় ৫৫ শতাংশ নির্ভরশীল। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ১০ শতাংশ এবং তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসে ৩২ শতাংশ। এসবই মূলত আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশের জলবায়ু রক্ষার্থে ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্যতম ভরসা বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গএনইএফ। সংস্থাটি বলছে, দেশের জ্বালানি খাতে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। যা এই দশকের শেষ নাগাদ কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় হবে অনেক সস্তা ও অফুরন্ত উৎস। এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আমাদের বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে না উচ্চমূল্যে। একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণও কমানো যাবে।

×