ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

খাদ্য মূল্যস্ফীতি

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

খাদ্য মূল্যস্ফীতি

নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ফলে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগামও টেনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ১৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। টানা আট মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে আছে। বাজারে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। শীতের শুরুতে বাজারে শাকসবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম তেমন কমছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপও কাজ করছে না বলেই অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে অভিযান। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে যুক্ত হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। নজরদারির পাশাপাশি কৃষিপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো বাজারে সবজি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্যহ্রাসে পেঁয়াজ, চাল, তেল, চিনি, আলু ও ডিমের মতো পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান সুফল মেলেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এ সময়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এবার হয়েছে ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। ইতোমধ্যে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গেছে। তবে অতীতের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক সুবিধা পেতে আগে মূল্যস্ফীতি কম দেখানো হতো। অর্থনীতি নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বিবিএস পরিসংখ্যানে কারসাজি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বিবিএসের প্রকাশ করা পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতি অনেক কম দেখানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি গত সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরে ১০০ টাকায় যে পণ্য ও সেবা কেনা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বরে একই পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে ভোক্তাকে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। সারাদেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে সাড়ে সাতশ’ পণ্য ও সেবার মূল্যের ওপরে নির্ধারিত সময়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে থাকে বিবিএস। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন, তার ভেতর রয়েছে মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার তদারকিÑ এই তিনের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি করতে হবে। দেশের মানুষ আশা করছে যে, আগামী বছরের প্রথমদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

×