ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

টাইগারদের টেস্ট জয়

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

টাইগারদের টেস্ট জয়

টানা পাঁচ টেস্টে হতাশার প্রদর্শনীর পর দেশবাসীকে দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলায় বরাবরই পিছিয়ে থাকা টাইগাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে একদিকে নিজেদের যেমন উজ্জীবিত করেছে, তেমনি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেও আশাবাদ জুগিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টানা ১৫ বছর পর টেস্টে জয়ের মুখ দেখা নিঃসন্দেহে স্মরণীয়। কেননা, প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রান করার পর টাইগাররা জিতেছে। ২৪ বছর ধরে ১৫০টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। এই জয় ছিল ইতিহাসে ২২তম, এখানে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে এত কম রান করে আগে কখনো টেস্ট জেতেনি। কিংস্টনে আরও অনেক রেকর্ড ও মাইলফলক ধরা দিয়েছে বাংলাদেশকে। কিংস্টন টেস্ট জিতে চলতি বছরে দেশের বাইরে বাংলাদেশ টেস্ট জিতল ৩টি। এর আগে এ বছর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ২ টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল। তার আগে কখনোই এক বছরে দেশের বাইরে দুটির বেশি টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ দেশের বাইরে ২টি টেস্ট জিতেছিল। আর সেটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই।
বাংলাদেশ দলের আকর্ষণীয় জয় বিশ্লেষণ করলে বলতেই হবে যে, খেলোয়াড়রা অদম্য ও জয়ের মনোভাব নিয়ে খেলেছে, সেইসঙ্গে তাদের ভেতর ছিল টিম স্পিরিট। ফলে, কয়েকজন অবাক করা ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত হলেও দলের প্রতিটি সদস্যই এই জয়ে অবদান রেখেছে। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে বাহবা দিতেই হবে। শুধু ৫ উইকেট শিকারই নয়, দীর্ঘসময় ধরে পিচ আঁকড়ে রেখে ব্যাটিং করে তিনি অপরপক্ষের ব্যাটসম্যানকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার তারই পাওয়ার কথা। তরুণ ব্যাটিং প্রতিভা সাদমান ইসলাম ছিলেন প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার। ব্যাটিং ধস ও লো স্কোরিং ইনিংসে তার ৬৪ রান দলকে লড়াইয়ের মেজাজ এনে দিয়েছিল। বলতেই হবে যে, জাকের আলী ৯১ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন, সাহসে-বীরত্বে-শৌর্যে তা অংশ হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট-রূপকথার। অথচ জাকের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন! একজন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভাষায়: ‘কিংবদন্তি সব ফাস্ট বোলারের জন্মভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যাদের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় পাতায় গতির ঝড় তোলার আশ্চর্য সব গল্প। এর অনেকটাই মঞ্চস্থ হয়েছে কিংস্টনের এই স্যাবাইনা পার্কে। সেই স্যাবাইনা পার্কেই বাংলাদেশের এক বোলারের গতির ঝড়ে নাস্তানাবুদ ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা, উইকেটের সঙ্গে শরীর বাঁচানো নিয়েও যাঁদের ভুগতে হচ্ছে চরম উৎকণ্ঠায়। নাহিদ রানার কল্যাণে এই টেস্টে তা কোনো বিচ্ছিন্ন দৃশ্য হয়ে থাকেনি।’
ইতিবাচক লড়াকু মনোভাব নিয়ে খেললে যে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে ফেলা যায়, ওয়স্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে তারই স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামীতেও যেন এমন সম্মিলিত পারফরম্যান্সের দৃষ্টান্ত রেখে জয়বাদী ক্রিকেট তারা উপহার দেয়।

×