ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

একটি সহমর্মিতাপূর্ণ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার আহ্বান

হৃদয় পান্ডে

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

একটি সহমর্মিতাপূর্ণ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার আহ্বান

একটি সহমর্মিতার পৃথিবী গড়ে তোলা কি আদৌ সম্ভব? আমরা কি কখনো এমন একটি বিশ্ব কল্পনা করতে পারি, যেখানে প্রতিটি মানুষের জীবন হবে মর্যাদাপূর্ণ, সম্পর্কগুলো হবে নির্ভেজাল, এবং প্রকৃতি থাকবে সুরক্ষিত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে দেখতে পাই, সহমর্মিতার অভাবেই মানবসমাজ বারবার সংকটে পড়েছে। ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্র- সবখানেই সহমর্মিতার প্রয়োজনীয়তা বারবার সামনে এসেছে।

আজকের পৃথিবীতে যেখানে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, সেখানে মানুষের মানসিকতার উন্নয়ন যেন থমকে আছে। প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই আমরা দেখতে পাই যুদ্ধ, সহিংসতা, বৈষম্য, এবং স্বার্থপরতার করুণ চিত্র। অথচ এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের হাতেই। প্রয়োজন সদিচ্ছা কার্যকর উদ্যোগের।

সহমর্মিতার অভাব কেন? কারণটা হয়তো আমাদের চেতনায় লুকিয়ে থাকা আত্মকেন্দ্রিক প্রবৃত্তি। মানুষ নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্যের কষ্ট কিংবা দুর্দশার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবজাতি কখনো এককভাবে সফল হতে পারে না। আমাদের একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।

সাম্প্রতিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে তাকালে বোঝা যায়, সহমর্মিতার অভাবে আমরা কী পরিমাণ ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি। একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে প্রকৃতি ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয়ে অর্থনৈতিক এবং মানবিক ক্ষতি ডেকে আনছে। অথচ একটি সহমর্মিতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

সহমর্মিতা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয়, রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, এক দেশের কার্যকলাপ অন্য দেশের মানুষ এবং প্রকৃতিকে কীভাবে প্রভাবিত করে। আজকের পৃথিবীতে দরকার এমন একটি চেতনা, যেখানে সব দেশ একে অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসবে। শক্তিধর দেশগুলো যদি ক্ষুদ্র দেশগুলোর প্রতি সহমর্মিতাপূর্ণ হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া অনেক সহজ হবে।

এই সহমর্মিতার বীজ বপন করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। একটি শিশুকে যদি মানবিক মূল্যবোধ শেখানো হয়, তাহলে সে বড় হয়ে সেই শিক্ষাকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করবে। পরিবার, স্কুল, এবং সমাজসবখানে এই মূল্যবোধের চর্চা থাকা জরুরি।

আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাও এমন হতে হবে, যেখানে মানুষ একজন আরেকজনের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দ খুঁজে পাবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একত্রে অর্জিত হবে তখনই, যখন মানুষের হৃদয়ে থাকবে সহমর্মিতার গভীর অনুভূতি।

সবশেষে বলা যায়, সহমর্মিতার বিশ্ব গড়ে তোলার কাজ সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। এটা শুরু হতে পারে একটি মানুষ থেকে, একটি পরিবার থেকে, একটি সমাজ থেকে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে, আমাদের প্রত্যেককে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। আজকের সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের পৃথিবী গড়ে তুলবে। আসুন, আমরা সেই পৃথিবীর জন্য কাজ শুরু করি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ  

×