ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বাঙালির মেধা, মনন ও সৃজনশীল উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে মঙ্গলবার। উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে বাংলা একাডেমির পথচলা শুরু। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের দাবির মুখে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদা স্বীকৃত হলে, এর উন্নয়নকল্পে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে ভাষা শহীদদের রক্তের ঋণকে ধারণ করে ১৯৫৫ সালে স্থাপিত হয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি। বাঙালি জাতিসত্তা, মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমি ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে, যা বাঙালি জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও মননের প্রতীক হিসেবে এখনো ধারণ করে চলেছে তার ঐতিহ্য। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও বাংলা একাডেমি তার ঐতিহাসিক গৌরবদীপ্ত পথচলা থেকে এতটুকুও বিচ্যুত হয়নি। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে বাংলা একাডেমি সর্বদা সচল ও সক্রিয় থেকেছে এবং দেশ ও জাতি গঠনে পালন করেছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। তবে স্বীকার করতে হবে যে, নিকট অতীতে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কিছুটা হলেও পথভ্রষ্ট হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ফলে, প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব একাডেমিক কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এর অবসান ঘটবে বলেই প্রত্যাশা।
এও স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমানে প্রচলিত মননশীল গবেষণার পরিবর্তে বাংলা একাডেমির কার্যক্রম প্রধানত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অমর একুশে বইমেলার মধ্যে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা বাংলা একাডেমির অন্যতম একটি দায়িত্ব। কেননা, অমর একুশে বইমেলা ইতোমধ্যে সর্বস্তরের বাঙালির প্রাণের বইমেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলা সৃজনশীল বইপুস্তক প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম। এর ফলে প্রকাশক, লেখক ও পাঠকের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে, যার সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম। ফলে, বইমেলার আয়োজন করতে গিয়ে বাংলা একাডেমির মূল কার্যক্রমও যথেষ্ট ব্যাহত হয়, যা কাম্য নয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে আগামীতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আরও বেশি গবেষণাধর্মী কাজে মনোনিবেশ করবে বলেই প্রত্যাশা।
‘অমর একুশে বইমেলা’ হচ্ছে দেশের জাতীয় বইমেলা, যার প্রথম অনানুষ্ঠানিক আয়োজন হয় চিত্তরঞ্জন সাহার উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে পাটের চটের ওপরে মাত্র ৩২টি বইয়ের পসরা সাজিয়ে। এরপর থেকে চলমান বাঙালির এই প্রাণের মেলা। তবে প্রতিবছর প্রকাশিত বিপুল সংখ্যক বইয়ের মধ্যে মানসম্মত ও পাঠোপযোগী কয়টি সে প্রশ্ন থেকে যায়। এত দৈন্য, এত অপ্রতুলতা কেন? প্রকাশকরা বলছেন, ভালো গবেষণা ও পাণ্ডুলিপির অভাব প্রকট। আজকাল লেখকরাও কেন যেন পাঠকপ্রিয় ও চটুল বই লিখতে সমধিক আগ্রহী। সিরিয়াস বই লেখালেখিতে তরুণদের তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে। তা কেন হবে? তরুণ প্রজন্ম যদি ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশ-কাল-কৃষ্টি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সমাজ-নৃতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক না জানে, তাহলে সমৃদ্ধ ও স্বশিক্ষিত হবে কিভাবে? অনেকটা এ কারণেই বইমেলার সাফল্য ও সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় সমাগত।

×