আমাদের শৈশবে শীতকাল ছিল আনন্দের; বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ছুটিতে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে আসা ছিল, ছিল শীতের রোদ গায়ে মেখে ডাঙ্গুলি, ফুটবল, ক্রিকেট খেলা। কিন্তু শীতকাল এখন উদ্বেগের। শীতে গ্রাম কিংবা শহরে বাতাসের গুণগতমানের অবনতি হয়। ভাসমান দূষণের পরিমাণ সারা বছর সমান থাকে না। দূষকগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিমি উচ্চতার মধ্যে ভাসমান থাকে; বিজ্ঞানীরা ওই ঊর্ধ্বসীমার নাম দিয়েছেন ‘প্ল্যানেটারি বাউন্ডারি লেয়ার’ বা পিবিএল। অক্টোবর থেকে বৃষ্টি কমে গেলে উত্তাপ কমতে শুরু করে, তখন পিবিএল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নেমে আসে, বাতাসের গতিও কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতি ঘনমিটার বাতাসে দূষণের ঘনত্ব বেড়ে সহনশীল মাত্রা অতিক্রম করে। শীতকালে বাতাসের ক্রমহ্রাসমান গতিবেগ যদি প্রতি সেকেন্ডে ২ মিটারের কম হয়, তখন ভাসমান দূষক সাগরের দিকে বয়ে নিতে পারে না; আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। শহরের বাতাস দূষিত হয়ে যাওয়ার পিছনে যানবাহনকে বহু দিন ধরেই দূষছেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু গাড়ির বাইরেও দূষণের উৎস কম নেই। পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, দূষণের প্রধান উৎস রাস্তার ধুলো, কয়লা-কাঠ ইত্যাদি পোড়ানো ধোঁয়া, নানা ধরনের কণা, শিল্পকেন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন, নির্মাণস্থল, আবর্জনার স্তূপ ও সেই আবর্জনায় আগুন ধরানো কিংবা পানি নিষ্কাশনের নালা, দীর্ঘদিন ধরে জমা থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধ, মরা জীবজন্তু রাস্তার ধারে পড়ে থাকা এগুলো থেকেও কিন্তু বাতাস দূষিত হয়ে চলেছে ক্রমাগত। বায়ুদূষণের প্রভাবে মানুষের মধ্যে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। যার মধ্যে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা অন্যতম। বাতাসে ভাসমান যে ১২টি দূষক চিহ্নিত তার মধ্যে দুটি, পিএম ১০ ও পিএম ২.৫ শীতকালে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করে।
অল্পবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বায়ুদূষণকেই দায়ী করছেন হৃদ্রোগ চিকিৎসকরা। আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং প্রকৃতির ওপর অত্যাচার রোধে সচেষ্ট হই তাহলে বায়ুদূষণ অনেকখানি হ্রাস পাবে। বিশেষ করে যানবাহন থেকে নির্গত বায়ুদূষক যেমন কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড যা সিএনজিচালিত যানে এ দূষণ কম হয়। কল-কারখানায় ধোঁয়া নির্গমন নল ও চিমনি থেকে বস্তুকণা পৃথক করার জন্য ছাকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস করে সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা, পরিত্যক্ত বর্জ্য না পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে শস্যের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা, হাটবাজার, বসতবাড়ি থেকে পচনশীল দ্রব্য দ্রুত অপসারণ করা, ডাস্টবিনের ময়লা দ্রুত শোধনাগারে পাঠানো, নগরে বসতি, শিল্প-কারখানা পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা, পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা। বৃক্ষ অক্সিজেন ত্যাগ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে।
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে
সর্বনাশা বায়ুদূষণ
শীর্ষ সংবাদ: