মানুষসহ জীবন্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশ দ্বারা বিকাশিত হয়। কিন্তু সেই পরিবেশ যখন বিভিন্ন দূষণের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, তখন সকল প্রাণী তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটন করতে পারে না। আজকাল পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। অন্যান্য দূষণের চেয়ে বায়ুুদূষণ খুবই মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বর্ষাকালে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের বাতাস পরিশুদ্ধ হলেও শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি হয়ে পড়ে বিষাক্ত। ঢাকা শহরসহ দেশের অন্যান্য শহরগুলো প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের শীর্ষ অবস্থানে থাকছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে ছিল। কারণ বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে নগরায়ণ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে চলছে উন্নয়ন প্রকল্প ও নির্মাণ কাজ। বিভিন্ন রাস্তা বা ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালি যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে না যায়, সেজন্য নির্মাণ স্থানে যথাযথ অস্থায়ী বেষ্টনী দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই সঙ্গে বেষ্টনীর ভিতরে নির্মাণ সামগ্রী (মাটি, বালি, রড ও সিমেন্ট ইত্যাদি) যথাযথভাবে ঢেকে রাখা এবং নিয়ম করে কমপক্ষে দুইবার স্প্রে করে পানি ছিটানোর কথা বলা আছে। এছাড়া নির্মাণাধীন রাস্তার যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা এবং নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে পরিবহন করার কথাও বলে অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়ম কেবলই কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। যার ফলে কমানো যাচ্ছে না বায়ুুদূষণ। নগরায়ণ ছাড়াও রয়েছে রাস্তার যানবাহনের কালো ক্ষতিকর ধোঁয়া। অপরিকল্পিতভাবে চলাচল করা এসব যানবাহনের ধোয়া পরিবেশকে করে তুলছে বিষাক্ত। আবার শহরে যত্রতত্র চলে কলকারখানা। এগুলোর ক্ষতিকর বর্জ্য ছেড়ে দেওয়া হয় পরিবেশে। এতে করে বাড়ছে বায়ুু দূষণ। এছাড়াও আরেকটি অন্যতম কারণ হলো বন নিধন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য রীতিমতো কাটা হচ্ছে গাছ। যার ফলে পরিবেশে বাতাসের ভারসাম্য রক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার ফলেও বায়ুদূষণ হচ্ছে।
বায়ু দূষণের হাত থেকে শহরগুলো থেকে বাঁচাতে হলে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। শুধু আইন করে নয় তা বাস্তবায়নের জন্য নিতে হবে যথাযথ ব্যবস্থা। সঠিক নিয়ম মেনে কলকারখানা পরিচালনা ও যানবাহনের ইঞ্জিনের মান উন্নতকরণ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও শহরগুলোকে সবুজায়নের আওতাধীনে আনতে হবে। এজন্য শহরের সড়কের পাশে, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনার আঙ্গিনায় সবুজায়ন করতে হবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ পার্ক করাও গুরুত্বপূর্ণ। এতে শহরের পরিবেশ ঠান্ডা থাকবে ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা যাবে। বর্জ্য যথাযথ স্থানে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া বায়ুু দূষণ রোধে সরকার ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে হলে বায়ুুদূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা থেকে
অতিষ্ঠ জনজীবন
শীর্ষ সংবাদ: