সম্পাদকীয়
মানুষের চোখের একটি ব্লিঙ্কিং রিফ্লেক্স থাকে। দীর্ঘসময় মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন বা এ ধরনের অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য জিনিসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ব্লিঙ্কিং রিফ্লেক্সটি নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণ চোখ যখন ব্লিঙ্ক করে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড থেকে পানি এসে ভিজিয়ে দেয় চোখটাকে। কিন্তু অন্য কারণে যখন চোখ ব্লিঙ্ক করে, তখন চোখে পানি আসে না। চোখ ভেজার এ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাকে আই ড্রাইনেস বা চোখের শুষ্কতা বলে।
চোখের শুষ্কতা বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ১০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই সমস্যার শিকার। এই রোগ দীর্ঘমেয়াদে চোখের ভিশনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। পরিবেশ, জীবনযাত্রার ধরন এবং স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ড্রাই আই সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে বাংলাদেশে এই সমস্যার প্রাদুর্ভাব আরও উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশে চোখের শুষ্কতাসংক্রান্ত গবেষণা খুবই কম। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স (ইনআইবিএমআর) বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ চোখের শুষ্কতা বা ড্রাই আই সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে রোগটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। গবেষণায় মোট ১ হাজার ৫০০ মানুষ অংশগ্রহণ করেন, যা ওই বছর জার্নাল অব ওকুলার ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্সে প্রকাশিত হয়।
ভারতে ৯ হাজার ৭৩৫ জন মানুষের মধ্যে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ভারতের শহর এলাকায় প্রায় ২২ থেকে ২৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ড্রাই আই সমস্যায় ভোগেন। তবে গ্রামীণ এলাকায় এই হার তুলনামূলক কম, মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। পাকিস্তানে প্রায় ২৫ শতাংশ শহুরে কর্মজীবী ড্রাই আইয়ে আক্রান্ত। শ্রীলঙ্কা ও নেপালে তুলনামূলকভাবে ড্রাই আইয়ের হার কম। উঁচু পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক বাতাসের কারণে এটি একটি প্রধান সমস্যা।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময় ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার, অফিসের এয়ার কন্ডিশনিং এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াকে এই রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বায়ুদূষণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনও এই সমস্যার অন্যতম কারণ। সাম্প্রতিক বায়ু দূষণের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বায়ু দূষণে ঢাকার প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে রোগটি বেশি দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা কম সময় ঘুমান, অন্ধকার রুমে ডিজিটাল স্ক্রিন দেখেন, বাইক চালান, দীর্ঘ সময় এসি রুমে থাকেন, আইটি সেক্টরে কাজ করেন তাদের ড্রাই আইয়ের সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে জীবনাচার পরিবর্তন জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় না দেওয়া, বিনোদনের জন্য স্ক্রিনের বিকল্প যেমন- বই পড়া, খোলামেলা স্থানে সময় কাটানো যেতে পারে। সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।