ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিদেশে অর্থ পাচার

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদেশে অর্থ পাচার

সম্পাদকীয়

বিদেশে অর্থ পাচার বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এতদিন পর্যন্ত এ নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা থাকলেও প্রামাণ্য কোনো দলিল ছিল না। দীর্ঘদিন পরে হলেও এতদিনে এ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়।

৯০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি বিদেশে অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছে। শ্বেতপত্রে ২৪টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বর্ণনা। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক বলেছেন, দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অভিমতের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে এই অমূল্য প্রতিবেদন।
শ্বেতপত্রে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা এক কথায় ভয়াবহ উদ্বেগজনক ও শিউরে ওঠার মতো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে (প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকা) এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে দেশ থেকে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এতে বোঝা যায় যে, বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সংশ্লিষ্টতায় দেশে একটি ক্রনি ক্যাপিটেলিজম গড়ে উঠেছিল। যার ফলে, দেশের সব উন্নয়ন-অগ্রগতি ধামাচাপা পড়ে যায়।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি মনে করে, প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বিদেশে। এছাড়া ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ও প্রবাস আয় থেকে যে অর্থ এসেছে, এর এক পঞ্চমাংশ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বিদেশে। তদুপরি বিদেশী ঋণ ও বিনিয়োগ হিসেবে যত অর্থ আসে, এর দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ পাচার হয় বিদেশে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রকাশিত শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। যা প্রকৃতপক্ষে ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের ফসল। জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে একটি বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমরা এটি কাজে লাগাতে পারব।’
বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থ পাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নজরদারি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশনও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আরও বাড়বে নিশ্চয়ই।

×