ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সম্মেলনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসা ক্ষেত্রে তারা নানা সমস্যা তুলে ধরেছেন। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিদেশী সহযোগী সংস্থাগুলো খুবই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত না হলে বৈশ্বিক উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। দেশে বর্তমানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের প্রধান অন্তরায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। তাই চোখ, কান খোলা রেখে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন তৃতীয় একটা পক্ষ সর্বত্র অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। শ্রমিকদের মধ্যে নানা রকম সন্দেহ দানা বাঁধছে। মালিক পক্ষ প্রশাসনিক সহায়তায় শ্রমিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে বারবার তৈরি হচ্ছে নৈরাজ্য। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এদিকে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতি দু’চার মাসে ঠিক করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। দেশে জ্বালানি সমস্যা লেগেই আছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন। আবার মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাও কঠিন। দুর্নীতির শিকড় এতটাই বিস্তৃত যে, সেখানে স্বচ্ছতা আনা বড় চ্যালেঞ্জ।
এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দরকার আছে কিনা, তাও ভেবে দেখছে সরকার। কেননা, এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশের পাওয়া কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে। ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়তি শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে। তাই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ২০২৬-এ না হয়ে ২০৩০-এ হতে পারে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে হলে কারও পরিচয়ে নয়, নিজেদের যোগ্যতায় তৈরি করতে হবে। আর যোগ্যতার কাঠামো পরিমাপ করা হয় শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে। এজন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, কিভাবে শিল্প-কলকারখানা সচল রেখে উৎপাদন বাড়ানো যায়। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ঋণের সুদহার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি রয়েছে গ্যাস সংকট। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আশার খবর হলো, কয়েক মাস আগেও এলসি খোলা খুব কঠিন ছিল, এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কোনোভাবেই যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না হয়, সেজন্য ব্যাপকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার। বিগত একদশক যাবৎ দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে সময় লাগবে নিঃসন্দেহে। তবে আমরা আশাবাদী, অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা
শীর্ষ সংবাদ: