ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পদ্মার ভাঙন যেন অভিশাপ

মোহাইমিনুল ইসলাম হিমেল

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

পদ্মার ভাঙন যেন অভিশাপ

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ নদী সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত হলেও মুন্সিগঞ্জে পদ্মার পাড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে এই নদী যেনো তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলা অত্যন্ত অবহেলিত জনপদ মুন্সিগঞ্জে বছরের পর বছর নদী ভাঙন অঞ্চলের একটি চিরাচরিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে প্রতিবছর পদ্মার ভাঙ্গনে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং টঙ্গিবাড়ী উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার তাদের ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে পদ্মার ভাঙনে লৌহজং উপজেলার ৩৫ শতাংশ, টঙ্গিবাড়ির ১৫ শতাংশ এবং সদরের বেশ কিছু অংশ হারিয়ে মানচিত্র ছোট হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের ভাঙনকবলিত এসব এলাকার মানুষ সবকিছু হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন এবং ভাসমান মানুষের মতো মানবেতর জীবন যাপন করেন সাধারণত প্রতিবছর অবৈধ, অপরিকল্পিত, অবৈজ্ঞানিক এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, অতি বৃষ্টি উজান হতে নেমে আসা প্রচÐ গতির পানির ঢল, পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে নদী-তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন গ্রাম, রাস্তা-ঘাট, আবাদি জমিসহ সরকারি বেসরকারি নানা অবকাঠামো নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে

লৌহজং উপজেলা বহু আগে থেকেই উন্নত জনপদ হিসেবে সুপরিচিত একসময় উপজেলায় দিঘলী বাজার নামে একটি স্থান ছিলো সেখান থেকে সরাসরি ভারতের কলকাতায় নৌপথে লৌহসামগ্রি আমদানি রপ্তানি করা হতো স্থানীয় প্রবীণদের মুখে শোনা যায় সমগ্র মুন্সিগঞ্জের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল এই দিঘলী বাজার স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, বড় বড় ব্যাংকের শাখাসহ নানা উন্নত অবকাঠামো ছিলো এখানে কিন্তু প্রমত্তা পদ্মার আগ্রাসনে সম্পূর্ণ বাজার নদী গর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায় এখনও লৌহজং-এর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন চলমান বর্তমানে কনকসার, গাউদিয়া, সুন্দিসা, বেজগাঁওসহ বহুগ্রাম নদী ভাঙ্গনের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে নদী ভাঙন এভাবে চলমান থাকলে খুব শীঘ্রই হারিয়ে যাবে লৌহজং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি লৌহজং কলেজ এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাজার, প্রাথমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা নিশ্চিহ্ন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গত কয়েক বছরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় হাসাইল ইউনিয়নের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং পাঁচগাঁও কামারখাড়া ইউনিয়নের অর্ধাংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী নদী তীড়বর্তী কয়েকটি উপজেলারও একই চিত্র লক্ষ করা যায়

প্রমত্তা পদ্মার এই আগ্রাসন রোধে ২০২২ ২০২৩ সালে দুই ধাপে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লৌহজং এর খাড়িয়া থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীর পার পর্যন্ত মোট ১৩ দশমিক ৭২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজের প্রচারণা মহা ধুমধামে শুরু করে এই বৃহ কাজের প্রচার প্রচারণা দেখে স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের সাময়িক মানসিক শান্তি মিললেও কাজের ধীর গতি, দুর্নীতি, প্রভাবশালীদের অপতপরতা এবং বিভিন্ন নৈরাজ্যের কারণে আজও আলোর মুখ দেখেনি লৌহজং উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি এই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রশাসনের নাকের ডগায় বালুদস্যুদের প্রভাবশালী কিছু সিন্ডিকেট দিনের পরদিন নদী থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন চালালেও প্রশাসনকে বাস্তবিক কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না অনতিবিলম্বে এই বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ এবং বাঁধ নির্মানে পর না হলে হুমকির সম্মুখীন হবে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই অঞ্চলটি সুতরাং রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করি বিষয়ে খুব দ্রæ যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে

 

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

×