ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান সম্প্রতি বাংলাদেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একটি দল হিসেবে একসঙ্গে এবং দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে কাজ করলে সম্ভাব্য বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সিং, করহার ও করনীতির নিশ্চয়তা প্রদান, সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ উন্নত করা, বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস অধিক কার্যকর এবং ক্রেডিট রেটিং উন্নত করার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও হবেন আকৃষ্ট। তবে ব্যবসা পরিচালনায় প্রয়োজন স্বচ্ছতা। অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির জাল সমাজের প্রতিটি সেক্টরে বিদ্যমান। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব, তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার  এবং সমস্যাগুলো  চিহ্নিত করতে হবে ব্যবসায়ীদের। যাতে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। অনেক বছর যাবৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিশ্বাসে ঘাটতি এবং অসামঞ্জস্য সম্পর্ক প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়েছে। আবার আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় ব্যবসা শুরুর সূচকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসা পরিচালনায় পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় উদ্যোক্তাদের। ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোক্তাদের সমস্যা দূর করতে তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।
বাংলাদেশে অর্থনীতির অবস্থা কয়েক বছর ধরে খুবই নাজুক। বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অতীতে যেসব ‘ডুইং বিজনেস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অবস্থান অধিকাংশ সময় নিচের দিকে ছিল। গত মার্চে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) বৈদেশিক বাণিজ্যের বাধাবিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতাকে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া আবশ্যক। চলমান শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক কারখানা ভাঙচুর ও বন্ধ থাকায় আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স। এক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে নানা রকম চ্যালেঞ্জ। ঝুঁকি তৈরি হয়েছে ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগÑ সবটিতেই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। আর ব্যবসা ও বিনিয়োগে স্বাভাবিক গতি না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঘটে বিচ্যুতি। কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে দুই বছর আগে থেকেই। নানা রকম আন্দোলন দেশজুড়ে লেগেই আছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। অন্যদিকে বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাওয়ায় প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে তৈরি করতে হবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ও বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ নিরাপদ করা একান্ত প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্বে দ্রুত ব্যবসাবাণিজ্যে স্থিতিশীল পরিবেশ আসবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবেÑ এটাই প্রত্যাশা।

×