ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শান্তি ও সীতির প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শান্তি ও সীতির প্রত্যাশা

চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে তাতে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নাকচ হলে তার অনুসারীরা সেখানকার আইনজীবী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন। আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। বুধবার নিহত আইনজীবীর জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল দেখে বোঝা যায় এ ঘটনায় মানুষ কতটা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
আদালত ভবনে বিক্ষোভের ঘটনায় ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের নাম ফের আলোচনায় এসেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রত্যাশিত ছিল। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন আইনজীবী এভাবে নৃশংসভাবে খুন হবেন এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আছে। আদালত তার জামিনের আবেদন নাকচ করেছেন। এই আদেশে তার অনুসারীরা সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারতেন। কিন্তু সেসব না করে বিক্ষোভের নামে পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছেন। এটি কোনোভাবে কাম্য ছিল না।
আইনজীবী হত্যার পর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। ইসকন নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে। আমাদের প্রত্যাশা, শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হবে; হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও রাজনৈতিক দলগুলো আইনজীবী হত্যার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত আটজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড শুধু নির্মমতা নয়, মানবসমাজের জন্য কলঙ্কজনক এক ঘটনা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আমাদের আর দেখতে না হয় সে জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সমাজজীবন থেকে মানবতা ও সহমর্মিতার বোধ একেবারে নির্বাসিত হোক এটা আমাদের কাম্য নয়। দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা নতুন নয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে প্রধানত শাসকদের ‘ভাগ করো ও শাসন করো’ নীতির প্রভাবে প্রায় সমগ্র ভারতেই মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস, অনৈক্য, এমনকি প্রাণঘাতী সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ ও ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও সে অভিশাপ থেকে জাতির মুক্তিলাভ ঘটেনি। এটি দুঃখজনক।
আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদাসতর্ক থাকবে এবং সর্বস্তরের মানুষও এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে, যেন কোনো অসাধু গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ না নিতে পারে। যে কোনো মূল্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা চাই।

×