ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডেঙ্গু জিকা চিকুনগুনিয়া

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু জিকা চিকুনগুনিয়া

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ১০ জনের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। ফলে, মানুষের কাছে এখন এডিস মশা যেন এক আতঙ্কের নাম। এই মশা ডেঙ্গু রোগের বাহক, যে রোগে দেশে প্রতিদিন অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ জন। ফলে, চলতি মাসের ২৬ দিনে ডেঙ্গু রোগে মৃত্যু হলো ১৫৬ জনের। মৃত্যুর এই সংখ্যাটি চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ। তাছাড়া চলতি বছরের শুরু থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৪৭১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৭১৫ জন।
ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে সম্প্রতি জনমনে নতুন শঙ্কা জাগাচ্ছে জিকা। জিকা ভাইরাসজনিত রোগ। গর্ভবতী মা জিকায় সংক্রমিত হলে গর্ভের সন্তানের ‘মাইক্রোসেফালি’র ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ মাথা ছোট হয়। বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হলে তাদের গুলেনবারি সিনড্রোমের (জিবিএস) আশঙ্কা থাকে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এই ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। আইইডিসিআরের গবেষকরা গত দেড়-দুই মাসের ডেঙ্গু রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার সময় অন্তত চারজনের দেহে জিকা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন, যারা রাজধানীর বাসিন্দা। তবে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি এখনও জানা সম্ভব হয়নি। জিকার পাশাপাশি দেশে চিকুনগুনিয়ায়ও অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির পরীক্ষাগারে চলতি বছর অনেক চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে গত এক মাসে চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৭ জন।
বর্তামানে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়াÑ এই তিন রোগেই আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের মানুষ। বিশেষ করে রাজধানীবাসী বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। তাই দেশে জিকা শনাক্ত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় ধরনের সতর্কসংকেত। কাজেই চিকিৎসা ও প্রতিরোধ বিষয়ে নতুন করে ভাবা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করা জরুরি। বিভিন্ন কর্মসূচি, চেষ্টা, তৎপরতার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের সর্বত্র বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। উদ্বেগের বিষয় হলো, সারাদেশের ডেঙ্গুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে থাকলেও জিকা ও চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি কী, তা এখন পর্যন্ত জানার কোনো ব্যবস্থা নেই।
ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়াÑ তিনটি রোগই এডিস মশা থেকে ছড়ায়, তাই এগুলো থেকে সুরক্ষা পেতে এডিস মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এক্ষেত্রে সচেতনতাই সর্বোত্তম পন্থা হতে পারে। এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে এবং বংশ বিস্তার করে। তাই বসতবাড়ির আঙিনায় পুরনো টায়ার, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম, ফুলের টবসহ নানা পাত্রে দীর্ঘদিন পরিষ্কার পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত এডিস মশা নিধন কার্যক্রম আরও কার্যকর ও জোরদার করা চাই।  চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলানোর পাশাপাশি  জিকা ও চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্তকরণ ও বিস্তার রোধে গবেষকদেরও অতীতের তুলনায় আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

×