কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ এখন ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে। কেননা, বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিল্প খাতকে উন্নত করতে হবে। তবে দেশে কয়েক বছর যাবৎ দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। এতে শিল্পের উৎপাদন খাতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বন্ধ হয়েছে অনেক শিল্প কলকারখানা। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেশনিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সংকট নিরসনে দাবি জানায়।
শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ। উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসব কাঁচামালের জোগান ঠিক রাখতে হবে। এতে যেমন বেকারত্ব হ্রাস পাবে, তেমনি কমবে মূল্যস্ফীতি। বৈশ্বিক রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, চীন থেকে অনেক বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হবে এদেশে। সেক্ষেত্রে জ্বালানি সংকট থাকলে এসব বিনিয়োগ ধরা কঠিন হবে। একজন ব্যবসায়ী গ্যাসের বদলে বৈদেশিক মুদ্রা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতির বড় জায়গা ছিল জ্বালানি খাত। স্বচ্ছতা না থাকায় তৈরি হয়েছে অনেক অলিগার্ক এবং ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা এমনটাই জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি।
অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে দিনে কয়েকবার গ্যাসের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় পণ্যের উৎপাদন। জানা যায়, এর অন্যতম কারণ সিস্টেম লস। সিস্টেম লসের কারণে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ গ্যাস চুরি হয়। বিগত ১৫ বছর ধরে চলছে এই অনৈতিক কাজ। এসব বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। শিল্প খাত না বাঁচলে থমকে যাবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। তাই শিল্পের গ্যাস-বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে পোশাক খাতে উৎপাদন কমেছে ৩০-৩৫ শতাংশ। স্টিল কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। সিরামিক কারখানায় উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাদের পক্ষে ডিজেল জেনারেটর চালানোও সম্ভব নয়। ফলে, প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধের পথে। কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়, সেটাই এখন মুখ্য বিষয়। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। জ্বালানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের সমস্যা নিরসন সম্ভব হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতিসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাও সহজ হবে।
জানা যায়, শিল্প খাতে গাসের চাহিদা ১০০ কোটি ঘনফুটের মতো। কিন্তু এখন দেওয়া হচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট। গত দুই বছরে শিল্প খাতে বাড়েনি জ্বালানির চাহিদা। ২০৩০ সালের দিকে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪৩০ কোটি ঘনফুট। এই চাহিদা মেটাতে আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভর করতে হবে বেশি। শিল্প খাতের উন্নতির জন্য জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনাও প্রয়োজন। বিগত ১৫ বছরে এ খাতের সুস্থ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ব্যাহত হয়েছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। আশা করা যায়, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই খাতে কাজ করার সুযোগ পাবেন ভালো ব্যবসায়ীরা। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাও হবে এবং দেশের অর্থনীতিও হবে সমৃদ্ধ।
গ্যাসের বিঘ্নহীন সরবরাহ
শীর্ষ সংবাদ: