সম্পাদকীয়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে নানারকম দাবি আদায়ের আন্দোলন। প্রায় প্রতিদিনই মাঠে নামছে কোনো না কোনো শ্রেণি বা সংগঠন। কোথাও কোথাও সেসব রূপ নিচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষে, তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থার সুযোগে ঘটছে এসব অস্থিতিশীল কর্মকা-। সম্প্রতি রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকদের বিক্ষোভ, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহবাগে লোক জড়ো করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। তুচ্ছ কারণে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও।
রবিবার রাজধানীতে ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আবার সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারও আগে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে। এছাড়া শিল্প এলাকাগুলোতে পোশাক শ্রমিকরা প্রায়ই বিক্ষোভে নামছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব ট্রায়াল’-এর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এমন পরিস্থিতি নগরের স্বাভাবিক জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ সংঘটিত বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে। বিশ্লেষকদের মতে দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দৃশ্যমান। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হওয়া উচিত। রাস্তায় নেমে যখন-তখন সড়কে অচলাবস্থা তৈরিসহ নানা কর্মসূচি ও ন্যায্য দাবি আদায়ের নানা আন্দোলন প্রকৃতই স্বতঃস্ফূর্ত, নাকি এসবের পেছনে আন্দোলনকারীদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে সে বিষয়ে জনমনে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। কাজেই কোনো শক্তির ইন্ধন বা যোগসাজশে এসব সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে কি না সেই বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা জরুরি।
নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার চার মাসে পদার্পণ করেছে। ইতোমধ্যে সরকারের সামনে তৈরি হচ্ছে একের পর এক চ্যালেঞ্জ, যা দিন দিন যেন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বৈষম্য নিরসন, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নানা অসংগতি ও দুর্নীতি দূরীকরণ, ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্ম্য হ্রাসসহ হরেকরকম সমস্যা নিরসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। কারণে অকারণে সংঘাত-সংঘর্ষ অসমর্থনযোগ্য ও নিন্দনীয়। কাজেই দেশের স্থিতিশীলতা বিঘœ ঘটানোর লক্ষ্যে সংঘটিত এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। একই সঙ্গে সরকারের সামনেও রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তারপরও সরকারকে দেশে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।