ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বর্তমানে এক ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যারা প্রকৃত অর্থে চিকিৎসক নন, তারা মিথ্যা পরিচয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে। আর এই প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসার আশায় ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। তারা ভুল চিকিৎসা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং ভুয়া অপারেশনের শিকার হয়ে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রতারণা মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনছে। গণমাধ্যমে প্রায়ই ভুয়া চিকিৎসক আটকের খবর দেখা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও এদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
ভুয়া চিকিৎসকদের অপকর্ম দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রোগীরা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং অনেক সময় তাদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ভুয়া চিকিৎসকদের কার্যক্রম শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই সক্রিয়। তবে গ্রামীণ এলাকায় এদের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রায়ই স্বল্প খরচে এবং সহজলভ্য চিকিৎসার জন্য তাদের শরণাপন্ন হন। এসব চিকিৎসকরা ভুল ওষুধের পরামর্শ দেন, ভুয়া অপারেশন করেন, এমনকি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। ফলশ্রুতিতে রোগীরা আরোগ্যের বদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের নজরদারি ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও সনদের যাচাই প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল । গ্রামীণ মানুষের বড় একটি অংশ এখনো আসল ও ভুয়া চিকিৎসকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে অক্ষম। এছাড়াও ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাফিলতি। অনেক সময় অভিযোগ থাকা সত্তে¡ও তারা পার পেয়ে যান। ভুয়া চিকিৎসকের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক স্বাস্থ্যখাতের ওপর। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন হারাচ্ছেন। পাশাপাশি বৈধ চিকিৎসকদের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন না কাকে বিশ্বাস করবেন।
এই সমস্যার সমাধানে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রতিটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর নিবন্ধন এবং পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা প্রয়োজন। ভুয়া চিকিৎসকদের কার্যক্রম চিহ্নিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো উচিত। একইসাথে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়ে প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর ভ‚মিকা পালন করতে হবে। ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান চালানো প্রয়োজন। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারামেডিকদের ব্যবহার করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানো যেতে পারে। এতে করে সাধারণ মানুষ ভুয়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার, যা ভুয়া চিকিৎসকদের কারণে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তি বা পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি। এই সমস্যার সমাধানে সরকার, চিকিৎসা সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সঠিক এবং নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ভুয়া চিকিৎসকদের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আমরা শুধু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারব না, বরং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব। একটি সুস্থ, সচেতন এবং নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার জন্য এই সমস্যা সমাধান অপরিহার্য।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ