বর্তমানে দেশের অন্যতম সমস্যার নাম বেকারত্ব। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ার ফলে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমান বেকারের সংখ্যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার আছেন। আবার সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দেশের অন্যতম এই সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছে বিশ্বের অন্যতম অর্থসহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক থেকে। শনিবার রাজধানীর পান্থপথের দৃক গ্যালারিতে বিশ্বব্যাংক ‘পেইন্ট দ্য স্কাই, মেক ইট ইওরস : তারুণ্যের চোখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, আমরা বাংলাদেশের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে চাই। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গঠনে যুবারা যে ভূমিকা পালন করে তা বিশ্বব্যাংক সবসময়ই স্বীকার করেছে। আমরা বিশ্বব্যাপী যুবসমাজের ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শক্তিশালী চিত্রকর্মকেও সম্মান জানাতে চাই। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে সহায়তাকারী প্রথম উন্নয়ন সহযোগী ছিল বিশ্বব্যাংক। এ পর্যন্ত সংস্থাটি ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশকে। বেকারত্ব নিরসনে সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের আশ্বাস দেশের শিক্ষিত ও বেকার তরুণ সমাজে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করবে।
যে কোনো দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রায় বেকারত্ব অন্যতম বাধা। সাধারণত চাকরির সিংহভাগই তৈরি হয় বেসরকারি খাতে।। কিন্তু দেশে সেই তুলনায় বেসরকারি খাতের প্রসার তেমন ঘটেনি। ফলে বেকারত্বের কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছেন কর্মক্ষম তরুণরা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন না। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ায় দিনশেষে হতশ্রী মুখ নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে অজস্র বেকার তরুণকে। এতে বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকার তলিয়ে যাচ্ছেন হতাশার অতল গহ্বরে। অনেকেই ভুগছেন পরিচয় সংকটে, সমাজে নিজের সম্পর্কে বুক ফুলিয়ে বলার মতো কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
শিক্ষিত তরুণরা দেশের বোঝা নয়, মূলত দেশের সম্পদ। দেশের বেকারত্ব সমস্যা নিরসনে তথা বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে যুবসমাজের স্থায়ী মুক্তির লক্ষ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি-বেসরকারি, প্রাইভেট সব খাতে নজর দেয়া জরুরি। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা আবশ্যক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নানা অসঙ্গতি দূর করে দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য ছিল কর্মক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে বেকারত্বের মাত্রা শিথিল করা এবং এক পর্যায়ে বেকারত্ব মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। তাই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় শিক্ষিত যুবসমাজের মেধা ও শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে একদিকে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধি লাভ করবে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে আলোর মুখ দেখবেÑ এই প্রত্যাশা।
কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংক
শীর্ষ সংবাদ: