ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কৃষিবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কৃষিবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ

সম্প্রতি পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে দেশে বিদ্যুৎ সংকটের শিরোনাম। সেই সঙ্গে ভারতীয় আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিগত সরকারের বিদ্যুৎ চুক্তির কথাও আলোচিত হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। তার কারণ ছিল ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চেয়েছে আদানি। সেইসঙ্গে তারা হুমকি দিয়েছে বকেয়া পরিশোধে অপারগ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার। রাজনৈতিক মহলের বাইরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। অনেকেই বলেছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের বা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমনটি করেছে তারা। যদিও এরই মধ্যে সরকার বকেয়ার বড় একটি অংশ পরিশোধ করেছে। ফলে, সংকট এখন অনেকটা সামাল দেওয়া গেছে বলেই মনে হয়। এই সংকট সামলানোর বিষয়টিও কৌতূহলোদ্দীপক।
আশার আলো দেখাচ্ছে সিরাজগঞ্জ সোলার পার্ক। বিদ্যুতের চাহিদার টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ কৃষিবান্ধব। এক সময় ধারণা করা হতোÑ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বা জমি চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সিরাজগঞ্জের এই সোলার পার্কটি আমাদের পুরনো সেই ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে নতুন ধারণা উপস্থাপন করছে। তবে পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি দেশের জন্য যেমন জরুরিÑ তেমনি সরকারের তরফেও পরিবেশের গুরুত্বের দিকটি মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
এ হিসেবে বলা যায়, সিরাজগঞ্জের সোলার পার্কটি আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রণী প্রকল্প, যা একই সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা যেমন মেটাবে, তেমনি দেবে সুস্থ পরিবেশের নিশ্চয়তাও। ফলে, জমি থাকবে পশুপালন ও মৌসুমি চাষাবাদের উপযোগী। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়Ñ চলতি বছরের ১৪ জুলাই কার্যক্রম শুরু করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে প্রায় তিন কোটি ১৬ লাখ ইউনিট (কিলোওয়াট প্রতি ঘণ্টা) বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সায়দাবাদ এলাকায় যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) ২১৪ একর অনাবাদি জমিতে বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) যৌথ মালিকানায় গড়ে ওঠা এই প্রকল্পটির বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মহাপরিকল্পনা (আইপিইএমপি) অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। 
পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, আসন্ন শীত মৌসুম সামনে রেখে সোলার প্যানেলের নিচে টমেটো, কুমড়া, কচু, শাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি লালন-পালন করা হচ্ছে ছাগল, ভেড়াসহ গবাদিপশু। সৌরবিদ্যুতের জন্য সব সময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আবাদি জমি। সেই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে দেশের নতুন সব সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি হাঁস, মাছ চাষ কিংবা শাক-সবজি ফলানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এটিসহ অনেক কেন্দ্রে এভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কৃষিবান্ধব সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো চাই।

×