-
ইতোমধ্যে অন্তবর্তী সরকারের ১০০ দিন পূরণ হয়েছে। সেই উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণও দিয়েছেন। সেই ভাষণ দেশের অধিকাংশ জনগণই শুনেছেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরও চলছে বেশ মতপার্থক্য। একেক দলের একেক মত বেরিয়ে আসছে। গণমাধ্যমের সুবাদে সেসবও এদেশের জনগণ জানতে পারছে। কেউ আগে সংস্কার চাইছে, কেউ আবার নির্বাচন। কিন্ত এই সংস্কার ও নির্বাচন চাওয়ার অধিকার আসলে কার হাতে? সত্যি বলতে, কাগজে কলমে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ লেখা থাকলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। এদেশের মানুষ ‘সংস্কার’ নামক কঠিন শব্দ বুঝে না। এদেশের মানুষ বুঝে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকা, সড়কে পরিবহণ খরচ সহনীয় মাত্রায় থাকা, চিকিৎসা সেবা সহজ হওয়া। তারা বুঝতে চায়, ইন্টারনটের দাম কম হোক, তেলের দাম কম হোক, পোশাকের দাম কম হোক। এইসব সুবিধা যারা দিতে পারবে এদেশের জনগণ তাদেরকেই ভালোবাসবে।
অন্তবর্তী সরকারের ৩ মাসে চোখে পড়ার মতো কিছু কাজ রয়েছে। তবে এই সরকারের কাছে জনগণের কাঙ্খিত প্রত্যাশা এখনও পূরণ হয়নি। যদিও অল্প সময়ে এই জাজমেন্ট করার সুযোগও নেই। তবে সরকারের উচিত দৃশ্যমান কিছু কাজ করা। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে, জনগণ আসলে কি চায় সেটা বুঝতে পারা। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে বলা যায় এই সরকার এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। অথচ এই সরকারের কাছে জনগনের এটিই ছিলো অনেক বড় প্রত্যাশা। এই সিন্ডিকেট অতীতেও এদেশের মানুষের রক্ত চোষে নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। সরকার বদল হলেও যদি জনগণের ভাগ্য না বদলায় তাহলে জনগণ আবারও আস্থা হারাবে। জনগণের প্রাথমিক যেসব চাহিদা রয়েছে সেসব পূরণ করে জনমনে স্বস্থি ফেরানোটাই হোক প্রথম সংস্কার। সংবিধান, আইন, নির্বাচন এসব সংস্কারের সময় আছে। জনগণকে এখন যাতে কোন শক্তি আবারও ভিন্নদিকে ধাবিত করতে না পারে সেজন্য জনমনে স্বস্থি ফিরিয়ে আনা জরুরি।
আজকাল সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষ বাজারে গেলেই হা-হুতাশ করেন। মাছ-মাংসের দাম যেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এই যখন অবস্থা তখন এই সরকারের উচিত এই সেক্টরে আরও বেশি গরুত্ব দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা। এই সমস্যা থেকে জনগণ যেদিন রেহাই পাবে সেদিন, বাংলাদেশের অনেক সমস্যা আপনা-আপনি দূর হয়ে যাবেÑ এমনটিই প্রত্যাশা। বর্তমানে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশি। তার সাথে বেকারত্ব অনেক বড় একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। সেইসঙ্গে দ্রব্যমূল্যের মধ্যে উর্ধগতি আরও জটিল সমস্যায় ফেলছে জনগণকে। এরমধ্যে দেশে দুযোর্গ, বিপ্লব নানা কিছু ঘটে গেলো। তার সাথে বৈদেশিক চাপ ও ষড়যন্ত্র তো আছেই। সবমিলিয়ে বর্তমান সরকারের একটা বিরটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই। তবে এই পরীক্ষা ও চাপ সবকিছুই এই সরকার মাথা পেতে নিয়েছে এদেশের জনগণের জন্য। অর্থাৎ এদেশের জনগণকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে, তাদের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে। জনগণও এই সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা করছে।
লেখক : সাংবাদিক