ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল

বিশ্বের একমাত্র উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল ‘অরবিস’ চক্ষুরোগ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসেছে। সাম্প্রতিক যাত্রা নিয়ে দেশে হাসপাতালটির যাত্রা হলো মোট এগারোবার। এবার ১৮ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চক্ষু চিকিৎসক ও চক্ষু খাতের অন্য পেশাজীবীদের সরাসরি অস্ত্রোপচার ও রোগীদের যত্ন বিষয়ে সিইআটিসিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ দেবেন অরবিসের কর্মী (ক্লিনিক্যাল স্টাফ) ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এ সময় কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বের একমাত্র উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল ‘অরবিস’ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। গত প্রায় চার দশকে হাসপাতালটি শিশুদের চক্ষু চিকিৎসা, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনা সার্জারি, কর্নিয়াল রোগ এবং আই ব্যাংকিং, প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি (আরওপি) এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর স্থানীয় চিকিৎসকদের দক্ষতা ও জ্ঞান উন্নত করতে সহায়তা করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশে ৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা করেছে, ৪৫ লাখ ব্যক্তির চোখের চিকিৎসা দিয়েছে ‘অরবিস’। এছাড়া ২ লাখ ৫৮ হাজার চক্ষু সার্জারি এবং ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে চোখের চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪২টি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে চক্ষুসেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারী নেতৃত্বাধীন গ্রিন ভিশন সেন্টার, যা নারীদের জন্য প্রচলিত বাধাগুলো দূর করে সেবার সুযোগ বৃদ্ধির মতো কার্যক্রম। ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সেই সঙ্গে ১৭টি মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) হাসপাতাল, ৪টি তৃতীয় পর্যায়ের (টার্শিয়ারি) হাসপাতাল, ৪টি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার এবং ২টি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা উন্নত করতে সহায়তা করেছে। এমনকি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করতে অংশীদার হয়েছে ‘অরবিস’। এই রোগটি শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০০০ সালে অরবিস বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম চালু করে এবং স্থানীয় চক্ষু হাসপাতাল ও এনজিওদের সঙ্গে মিলে চক্ষুরোগ প্রতিরোধ ও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে, যা ইতোমধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং সিলেটের নারী চা শ্রমিকদের মাঝেও পৌঁছে গেছে।
অরবিস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক  একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা, যা দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে দু’শ’র বেশি দেশ ও অঞ্চলে দৃষ্টি-সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে- যাতে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ উন্নতি লাভ করতে পারে। বাংলাদেশে অরবিসের এবারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো, চোখের যত্নের মান বাড়াতে স্থানীয় চক্ষুসেবা পেশাজীবীদের দক্ষতা গড়ে তোলা ও চোখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। ইতোপূর্বে দেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের প্রথম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালে এবং ২০১৭ সালে সর্বশেষ কর্মসূচি হয়। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এমন অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের শিকার, যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শক্তিশালী ও টেকসই চক্ষুসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রশংসিত। বাংলাদেশে অরবিসের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকুকÑ এই প্রত্যাশা।

×