ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিপন্নদের কল্যাণে উন্নত বিশ্বের দায়িত্বশীলতা

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিপন্নদের কল্যাণে উন্নত বিশ্বের দায়িত্বশীলতা

সমকালীন বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতার  নেতিবাচক প্রভাবে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত বিশ্বের সামগ্রিক সামাজিক-প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ চরম বিপন্নতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছে। জীববৈচিত্র্য-জীবন জীবিকার প্রাত্যহিক গতিময়তা সত্যের কাঠিন্যে ভয়াবহ  ঝুঁকির মুখোমুখি। নানামুখী গবেষণার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ-তথ্যউপাত্ত-পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকৃত অর্থেই ধরিত্রীর সকল নাগরিকের হৃদয় গভীরে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অজানা আশঙ্কা-আতঙ্কের দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মিত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ-মতামত-ভবিষ্যদ্বাণী পুরোবিশ্বকে প্রতিনিয়ত নবতর প্রকরণে পরিবেশের সকল উপাদানের পরিবর্তনশীল গতিধারা সম্পর্কে প্রচণ্ড কৌতূহলী করে তুলছে। পরিত্রাণের সুগম পন্থা উদ্ভাবনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের পক্ষ থেকে করুণ আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হলেও তা কোনোভাবে উন্নত বিশ্বের কর্ণগোচরে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহের প্রতি চরম অবজ্ঞা-অমনোযোগ বিবেকপ্রসূত বিশ্ববাসীকে যারপরনাই হতবাক করছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে প্রচণ্ড বিপন্ন। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহসহ যাবতীয় উন্নয়ন উদ্যোগ তথা দারিদ্র্য দূরীকরণ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষণ ও জনস্বাস্থ্য, পল্লী উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আর্তনাদে নিপতিত হয়েছে গরিব ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো।  
কার্বন নিঃসরণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এক চরম দুর্ভাগার দেশে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ বিশ্বে সর্বনিম্ন হওয়া সত্ত্বেও এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮.৫, জাপানের ৯.৫, মালয়েশিয়ার ৭.৭, ভারতের ০.৮ টনের বিপরীতে বাংলাদেশের নিঃসরণ মাত্র ০.৩ টন। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষতিকর প্রভাবও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পূর্ববর্তী কোনো অঙ্গীকারই পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায়, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২১০০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অঙ্গীকারও নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ইন্টার গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) ৪র্থ সমীক্ষা অনুসারে, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ যা ২.৫০ থেকে ৩.৫০ সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।  জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ১৯৮৫-১৯৯৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে ক্ষতি হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি। ২০৩০ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ শতাংশ এবং ২০৭৫ সাল নাগাদ ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ৪৫ সেমি.।
আমাদের সকলের জানা যে, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ প্রশমনের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলনে পরিবেশ সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার এমন অবস্থায় স্থিতিশীল রাখা, যাতে জলবায়ুগত মানবিক পরিবেশের জন্য তা বিপত্তিকরণ না হয়। ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের কিয়োটো শহরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের জন্য দায়বদ্ধ করে যে বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, তা কিয়োটো প্রটোকল নামে সুপরিচিত। বর্তমানে এই চুক্তির দ্বারা ১৯২টি দেশ দায়বদ্ধ রয়েছে। চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলতে পারার মতো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনার জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ সভায় গৃহীত লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে পূরণের কথা বলা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে উন্নত দেশগুলোকে নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে এই চুক্তিকে পরিবর্ধন করে পেশ করা হয়, যা দোহা সংশোধনী নামে পরিচিত।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন, কপ-২১। সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি ও উপস্থিত ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি বৈশ্বিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস প্রশমন করার পদ্ধতির অংশ হিসেবে নির্গমন হ্রাস করতে চুক্তিতে সর্বসম্মতভাবে রাজি হয়েছিল। সদস্যরা তাদের কার্বন নিঃসরণকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হ্রাস এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল। ২২ এপ্রিল ২০১৬ নিজস্ব আইনি ব্যবস্থায় গ্রহণের মাধ্যমে ১৭৪টি দেশ নিউইয়র্কে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই সম্মেলনের আগে ১৪৬টি জাতীয় জলবায়ু প্যানেল প্রকাশ্যে জাতীয় জলবায়ু অবদানের একটি খসড়া উপস্থাপন করে, যা ‘উদ্দিষ্ট জাতীয় নির্ধারিত অবদান’ নামে স্বীকৃত। পূর্বের চুক্তিগুলোতে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক দেশই চুক্তি মানেনি বা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে। নানা কারণে ‘কপ-২১’ সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘কপ-১৫’ সম্মেলনের হতাশা কাটিয়ে প্যারিস চুক্তিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আশার আলো দেখেছিল। অনেকেই পূর্বের যে কোনো জলবায়ু চুক্তির চেয়ে প্যারিস চুক্তিকে অনেক শক্তিশালী ও উচ্চাভিলাসী আখ্যায়িত করেছেন। সব জলবায়ু সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ছিল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস করা। কিন্তু নবায়নযোগ্য গ্রিন এনার্জি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কমবেশি কাজ করলেও কার্বন নিঃসরণ কমাতে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি।  
ধারাবাহিকতায় অতিসম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯। উক্ত সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের অংশগ্রহণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু দূষণের জন্য দায়ী এমন অনেক দেশই সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিল। বিভিন্ন দেশের জলবায়ু সচেতন প্রতিনিধিদের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনে ১ হাজার ৭৭৩ জন জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অত্যন্ত নির্ভীক-বিচক্ষণতার সঙ্গে সাম্প্রতিক স্বৈরচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং বিগত সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। তাঁর বর্ণনায় কীভাবে তরুণ প্রজন্ম উদ্ভাবনী মেধা ও প্রজ্ঞার সমীকরণে সার্থক গণঅভ্যুত্থান সফল করেছেন, তা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতিকে যথোপযুক্ত মর্যাদায় সমাসীন করার রূপকল্প উপস্থাপন করেন। বিপুল সংখ্যক প্রাণ বিসর্জন ও অগণিত আহতদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্যকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতার আহ্বান জানান। সম্মেলনে উপস্থিত সরকারপ্রধানদের অজস্র অভিনন্দন ও শুভ কামনায় প্রধান উপদেষ্টা উঁচুমার্গের সম্মানে অভিষিক্ত হন। একইসঙ্গে যাবতীয় আনুষঙ্গিক আর্থিক-কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাসের অভূতপূর্ব সাড়া অপরিমেয় অনুপ্রেরণার চিত্রপট তৈরি করে। ১৮ নভেম্বর দেশবাসীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনের সামগ্রিক বিষয়সমূহ উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ’-এর ভিত্তিতে নতুন জীবনধারা গড়ে  তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ‘তিন শূন্য’ ভিত্তিক নতুন পৃথিবী গড়ার ধারণা উপস্থাপন করেন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। মানুষ আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আত্মরক্ষাত্মক ও আত্মশক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার গোড়াপত্তন করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই গ্রহ ধ্বংসের কারণ। মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে। তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে, যা পরিবেশের প্রতিকূলে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দিচ্ছে। যাকে এই সৌরজগতের মতোই প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনের সাইড লাইনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। তাছাড়া তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ তিনি ২০ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  উল্লেখ্য, বৈঠকে তিনি জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কপ জলবায়ু সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত নয়। আমরা জানি বিশ্বের কি প্রয়োজন এবং আমাদের এর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। এটা দেশগুলোর একে অন্যের সহযোগিতায় হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, জলবায়ু আলোচনার বর্তমান পদ্ধতি বিশ্বের বেশিরভাগের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তিনি জলবায়ু আলোচনার নতুড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

 

বিপন্নদের কল্যাণে উন্নত বিশ্বের দায়িত্বশীলতা
সমকালীন বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতার  নেতিবাচক প্রভাবে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত বিশ্বের সামগ্রিক সামাজিক-প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ চরম বিপন্নতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছে। জীববৈচিত্র্য-জীবন জীবিকার প্রাত্যহিক গতিময়তা সত্যের কাঠিন্যে ভয়াবহ  ঝুঁকির মুখোমুখি। নানামুখী গবেষণার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ-তথ্যউপাত্ত-পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকৃত অর্থেই ধরিত্রীর সকল নাগরিকের হৃদয় গভীরে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অজানা আশঙ্কা-আতঙ্কের দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মিত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ-মতামত-ভবিষ্যদ্বাণী পুরোবিশ্বকে প্রতিনিয়ত নবতর প্রকরণে পরিবেশের সকল উপাদানের পরিবর্তনশীল গতিধারা সম্পর্কে প্রচণ্ড কৌতূহলী করে তুলছে। পরিত্রাণের সুগম পন্থা উদ্ভাবনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের পক্ষ থেকে করুণ আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হলেও তা কোনোভাবে উন্নত বিশ্বের কর্ণগোচরে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহের প্রতি চরম অবজ্ঞা-অমনোযোগ বিবেকপ্রসূত বিশ্ববাসীকে যারপরনাই হতবাক করছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে প্রচণ্ড বিপন্ন। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহসহ যাবতীয় উন্নয়ন উদ্যোগ তথা দারিদ্র্য দূরীকরণ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষণ ও জনস্বাস্থ্য, পল্লী উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আর্তনাদে নিপতিত হয়েছে গরিব ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো।  
কার্বন নিঃসরণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এক চরম দুর্ভাগার দেশে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ বিশ্বে সর্বনিম্ন হওয়া সত্ত্বেও এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮.৫, জাপানের ৯.৫, মালয়েশিয়ার ৭.৭, ভারতের ০.৮ টনের বিপরীতে বাংলাদেশের নিঃসরণ মাত্র ০.৩ টন। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষতিকর প্রভাবও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পূর্ববর্তী কোনো অঙ্গীকারই পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায়, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২১০০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অঙ্গীকারও নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ইন্টার গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) ৪র্থ সমীক্ষা অনুসারে, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ যা ২.৫০ থেকে ৩.৫০ সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।  জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ১৯৮৫-১৯৯৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে ক্ষতি হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি। ২০৩০ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ শতাংশ এবং ২০৭৫ সাল নাগাদ ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ৪৫ সেমি.।
আমাদের সকলের জানা যে, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ প্রশমনের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলনে পরিবেশ সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার এমন অবস্থায় স্থিতিশীল রাখা, যাতে জলবায়ুগত মানবিক পরিবেশের জন্য তা বিপত্তিকরণ না হয়। ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের কিয়োটো শহরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের জন্য দায়বদ্ধ করে যে বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, তা কিয়োটো প্রটোকল নামে সুপরিচিত। বর্তমানে এই চুক্তির দ্বারা ১৯২টি দেশ দায়বদ্ধ রয়েছে। চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলতে পারার মতো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনার জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ সভায় গৃহীত লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে পূরণের কথা বলা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে উন্নত দেশগুলোকে নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে এই চুক্তিকে পরিবর্ধন করে পেশ করা হয়, যা দোহা সংশোধনী নামে পরিচিত।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন, কপ-২১। সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি ও উপস্থিত ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি বৈশ্বিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস প্রশমন করার পদ্ধতির অংশ হিসেবে নির্গমন হ্রাস করতে চুক্তিতে সর্বসম্মতভাবে রাজি হয়েছিল। সদস্যরা তাদের কার্বন নিঃসরণকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হ্রাস এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল। ২২ এপ্রিল ২০১৬ নিজস্ব আইনি ব্যবস্থায় গ্রহণের মাধ্যমে ১৭৪টি দেশ নিউইয়র্কে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই সম্মেলনের আগে ১৪৬টি জাতীয় জলবায়ু প্যানেল প্রকাশ্যে জাতীয় জলবায়ু অবদানের একটি খসড়া উপস্থাপন করে, যা ‘উদ্দিষ্ট জাতীয় নির্ধারিত অবদান’ নামে স্বীকৃত। পূর্বের চুক্তিগুলোতে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক দেশই চুক্তি মানেনি বা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে। নানা কারণে ‘কপ-২১’ সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘কপ-১৫’ সম্মেলনের হতাশা কাটিয়ে প্যারিস চুক্তিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আশার আলো দেখেছিল। অনেকেই পূর্বের যে কোনো জলবায়ু চুক্তির চেয়ে প্যারিস চুক্তিকে অনেক শক্তিশালী ও উচ্চাভিলাসী আখ্যায়িত করেছেন। সব জলবায়ু সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ছিল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস করা। কিন্তু নবায়নযোগ্য গ্রিন এনার্জি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কমবেশি কাজ করলেও কার্বন নিঃসরণ কমাতে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি।  
ধারাবাহিকতায় অতিসম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯। উক্ত সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের অংশগ্রহণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু দূষণের জন্য দায়ী এমন অনেক দেশই সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিল। বিভিন্ন দেশের জলবায়ু সচেতন প্রতিনিধিদের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনে ১ হাজার ৭৭৩ জন জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অত্যন্ত নির্ভীক-বিচক্ষণতার সঙ্গে সাম্প্রতিক স্বৈরচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং বিগত সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। তাঁর বর্ণনায় কীভাবে তরুণ প্রজন্ম উদ্ভাবনী মেধা ও প্রজ্ঞার সমীকরণে সার্থক গণঅভ্যুত্থান সফল করেছেন, তা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতিকে যথোপযুক্ত মর্যাদায় সমাসীন করার রূপকল্প উপস্থাপন করেন। বিপুল সংখ্যক প্রাণ বিসর্জন ও অগণিত আহতদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্যকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতার আহ্বান জানান। সম্মেলনে উপস্থিত সরকারপ্রধানদের অজস্র অভিনন্দন ও শুভ কামনায় প্রধান উপদেষ্টা উঁচুমার্গের সম্মানে অভিষিক্ত হন। একইসঙ্গে যাবতীয় আনুষঙ্গিক আর্থিক-কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাসের অভূতপূর্ব সাড়া অপরিমেয় অনুপ্রেরণার চিত্রপট তৈরি করে। ১৮ নভেম্বর দেশবাসীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনের সামগ্রিক বিষয়সমূহ উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ’-এর ভিত্তিতে নতুন জীবনধারা গড়ে  তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ‘তিন শূন্য’ ভিত্তিক নতুন পৃথিবী গড়ার ধারণা উপস্থাপন করেন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। মানুষ আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আত্মরক্ষাত্মক ও আত্মশক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার গোড়াপত্তন করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই গ্রহ ধ্বংসের কারণ। মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে। তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে, যা পরিবেশের প্রতিকূলে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দিচ্ছে। যাকে এই সৌরজগতের মতোই প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনের সাইড লাইনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। তাছাড়া তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ তিনি ২০ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  উল্লেখ্য, বৈঠকে তিনি জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কপ জলবায়ু সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত নয়। আমরা জানি বিশ্বের কি প্রয়োজন এবং আমাদের এর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। এটা দেশগুলোর একে অন্যের সহযোগিতায় হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, জলবায়ু আলোচনার বর্তমান পদ্ধতি বিশ্বের বেশিরভাগের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তিনি জলবায়ু আলোচনার নতুন পদ্ধতির পরামর্শ দেন। সফলতা-ব্যর্থতার হালখাতা বিশ্লেষণে জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত যে, বিশ্বে পরিবেশ দূষণে দায়ী রাষ্ট্রসমূহ তেমন বিচলিত নয়। সমস্যার সমাধানে তাদের দায়িত্বশীলতা চরমভাবে উপেক্ষিত। ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের স্বাভাবিক আর্থ-সামজিক সচলতায় তাদের অবজ্ঞা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। মোদ্দাকথা, উন্নত বিশ্বের গভীর মনোযোগ আকর্ষিত না হলে জলবায়ু সম্মেলনের সফলতা কখনো প্রত্যাশার পর্যায়ে পৌঁছাবে না।
 লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানন পদ্ধতির পরামর্শ দেন। সফলতা-ব্যর্থতার হালখাতা বিশ্লেষণে জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত যে, বিশ্বে পরিবেশ দূষণে দায়ী রাষ্ট্রসমূহ তেমন বিচলিত নয়। সমস্যার সমাধানে তাদের দায়িত্বশীলতা চরমভাবে উপেক্ষিত। ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের স্বাভাবিক আর্থ-সামজিক সচলতায় তাদের অবজ্ঞা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। মোদ্দাকথা, উন্নত বিশ্বের গভীর মনোযোগ আকর্ষিত না হলে জলবায়ু সম্মেলনের সফলতা কখনো প্রত্যাশার পর্যায়ে পৌঁছাবে না।
 লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞান

×