রাষ্ট্রের বিবিধ কাঠামো পড়েছে নানামাত্রিক চ্যালেঞ্জে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে মুদ্রাস্ফীতির সংকটে দেশের চলমান অবস্থা অস্থিরতার পর্যায়ে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন আর্থিক খাতের অসংহত অবস্থায় সাধারণ মানুষের নিত্য জীবন অসহনীয় হয়ে উঠছে। চলমান এমন সংকটকে মোকাবিলা করে সামাল দেওয়া পরিস্থিতির ন্যায্যতা। সম্প্রতি সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বিভিন্ন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেন। নির্দ্বিধায় বললেন এই মুহূর্তে মানুষের ধৈর্য ধরা আসলেই কঠিন। এক হাজার টাকা বাজারে নিয়ে গেলেও প্রয়োজনে কত ঘাটতি থেকে যাচ্ছে তা উপলব্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম। নিজের দুঃসহ অভিজ্ঞতাও উল্লেখ করলেন তিনি।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পার হওয়ার সুসময়ে উপদেষ্টা তার যথার্থ মতামত দিয়ে পরিস্থিতিকে বিবেচনায় এনেছেন। মুদ্রাস্ফীতি আসলে অল্পদিনে হয় না। দীর্ঘকালীন এক অশান্ত প্রক্রিয়া। যা প্রতিনিয়ত সীমা ছাড়িয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ ততোধিক কঠিন। তবে সময় সাপেক্ষ হলেও সমাধান অধরা নয়। বিভিন্ন জায়গায় পণ্য সরবরাহের যে কঠিন শৃঙ্খল তাকে উপেক্ষা করা সহজ নয়। কৃষক থেকে গ্রাহক পর্যন্ত হরেক হাত বদলের কার্যক্রমও অদৃশ্য এক বাতাবরণ। খোদ কৃষক আর সরাসরি গ্রাহক দুই প্রান্তিকে আলাদা মেরু। হরেক যোগসাজশের পালাক্রমে কৃষক আর গ্রাহকের মাঝখানে কঠিন এক প্রাচীর। তার ওপর আবার বিগত আমলে হাজার কোটি টাকা ছাপানোর আর এক উন্মত্ত পালাক্রম। তাছাড়া জনসমক্ষে হাজির করা হয়েছে নিত্যনতুন উন্নয়ন মহাপ্রকল্পের হরেক কর্মযোগ। এসবের প্রাপ্তি অতি অবশ্যই সময়ক্ষেপণের মতো দুরবস্থা। নজির হিসেবে বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বললেনÑ যাত্রা মাত্র শুরু। দক্ষিণবঙ্গ তার যথার্থ ফল পেতে হয়তো বা পাঁচ বছরও অপেক্ষা করতে হবে। আলু-পেঁয়াজের যে বাড়তি দাম সেখানে শুল্ক কমিয়ে ভারসাম্য আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। চিনি, চালের শুল্কতেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। ব্যাংক ও বিমা খাতের সমস্যা থাকলে তা সমাধান করতে হবে। আপাতত কোনো ব্যাংক বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত হয়। ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু দুর্বল ব্যাংকের ক্ষতি পুষিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। সংশোধন করে তা সহনীয় অবস্থা তৈরিও সময়ের দাবি। কিছু ব্যাংক বিপত্তির মুখে পড়লেও বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি এখনো। আমানতকারীদের সুরক্ষিত রেখে বিভিন্ন কর্মোদ্যমে আস্থা ফেরানো হচ্ছে। দেশের সফলকামও উদ্যোগী ব্যবসায়ীদের আশঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আর্থিক খাতকে যথাস্থানে ফেরাতে দুর্নীতি, অনিয়মকেও কঠোরভাবে দমন করা চাই। নিষ্ঠা আর সততার সঙ্গে কাজ করে সংশ্লিষ্টরা যেন নতুন মনোবল আর উদ্দীপ্ত চেতনায় দেশের আর্থিক খাতকে বেগবান করতে পারেন। তেমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই বর্তমান সময়ে একান্ত জরুরি।
আমানতের সুরক্ষা
শীর্ষ সংবাদ: