রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক। ফলে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। আদালতের এই রায়ের প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী ও ডেমরাসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালকরা। অতঃপর দাবি আদায়ে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে শনিবার পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করেছেন ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালকরা। উল্লেখ্য, বুধবার রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাছাড়া বিভিন্ন সড়ক অবরোধে সৃষ্ট যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
ডিএসসিসির সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রিক্সা চলাচল করছে রাজধানীতে। যার বড় একটি অংশ ব্যাটারিচালিত। পুরনো প্যাডেলচালিত অনেক রিক্সায় ব্যাটারি লাগিয়ে ‘যান্ত্রিক’ করা হচ্ছে। রাজধানীর মূল সড়কের চেয়ে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিক্সার চলাচল বেশি। সুযোগ পেলে মূল সড়কেও চলাচল করে এসব রিক্সা। রাজধানীর পুরান ঢাকা, লালবাগ, হাজারীবাগ, আজিমপুরসহ ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরাসহ বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অসংখ্য ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করছে। ফলে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেকে আহত হচ্ছেন, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কয়েক দফা অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি এসব বাহন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের পট পরিবর্তনের পর সুযোগ বুঝে রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় ঢুকে পড়ে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক।
সারাদেশে ইতোমধ্যে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। এগুলো ঢাকার ছোট, বড় সব সড়কেই চলাচল করছে। ফলে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে অনেকে আহত হচ্ছেন, সেই সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে, যা উদ্বেগজনক। সবশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিক্সার ধাক্কায় এক ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, যা অপ্রত্যাশিত। কাজেই অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ না হওয়ার পেছনে প্রভাবশালী মহল তৎপর রয়েছে। চালকরা তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রিক্সা চালান। আবার ঢাকা মহানগরে বর্তমানে কয়েক লাখ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক চলাচল করছে, যেগুলো বন্ধ হলে তাদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়বে। যদিও এ যানবাহনগুলোর নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে চলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সড়ক আইনেও এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ সময়োপযোগী। কাজেই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ব্যাটারিচালিত রিক্সা
শীর্ষ সংবাদ: