বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের (আনুমানিক ৩০ লক্ষ) একটি নিখুঁত ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে, পাশাপাশি দেশে বিদেশে বেসরকারি চাকরির আরেকটি ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে যেটিকে ৩০ লক্ষ চাকরির ডাটাবেইজে পরিনত করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষিত বেকারের চাকরি নিশ্চিত করাই হবে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য। জনগন যদি আমাদের পাশে থাকে আমরা অবশ্যই এটি বাস্তবায়ন করতে পারব।
আইএলও প্রদত্ত বেকারত্বের সংজ্ঞাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের কাছে বেকারত্বের সংজ্ঞা হচ্ছে একজন চাকরিপ্রত্যাশী যুবককে নতুন চাকরিতে যে বেতন অফার করা হয়েছে সেটি দিয়ে সে তার স্ত্রী সন্তানদের ভরনপোষণ করতে পারবেনা বলে যদি সে মনে করে সেটিই হচ্ছে বেকারত্বের সংজ্ঞা।
মাথাপিছু আয় নয় বরং নুন্যতম মজুরির বৃদ্ধি হয়েছে কিনা, নি¤œ আয়ের মানুষের মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে কিনা, একজন কাজের বুয়ার মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে কিনা তার ভিত্তিতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত হবে। জিডিপির ভিত্তিতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ধারন আমরা বন্ধ করব। বাংলাদেশেকে মধ্য আয়ের দেশ আমরা তখন বলব যখন এদেশের সকল সকল গরীব মানুষ মধ্যবিত্তে পরিনত হবে।
মাথাপিছু আয় দিয়ে, জিডিপি দিয়ে মধ্য আয়ের দেশ নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এদেশের অর্থনীতির হিসাব নিকাশ ও পলিসি মেকিং এভাবেই করতে হবে। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেস্ক্রিপশনে বাংলাদেশের অর্থনীতির নীতিমালা প্রণীত হবে না। বাংলাদেশের জনগনের চোখ দিয়ে নীতিমালা তৈরি করা হবে, গরীব মেহনতী মানুষের জীবন জীবিকা বাংলাদেশের অর্থনীতির হিসাব নিকাশের ভিত্তি হবে। দাতা সংস্থাদের এই তথ্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই পরিকল্পনা একটি সাহসী এবং জনকল্যাণমুখী উদ্যোগের প্রতিফলন। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জনগণের স্বার্থে পুনর্গঠন করার একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন:
১. বেকারত্ব ও চাকরির ডাটাবেজ তৈরি
শিক্ষিত বেকারদের ডাটাবেজ: জাতীয় পর্যায়ে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে শিক্ষিত বেকাররা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং পছন্দের চাকরির ক্ষেত্র নিবন্ধন করতে পারবে। প্রতিটি চাকরিপ্রার্থীকে নির্দিষ্ট কোড দিয়ে সনাক্ত করা হবে, যাতে ডুপ্লিকেশন না হয়।
দেশি-বিদেশি চাকরির ডাটাবেজ: দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরির চাহিদার ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। সরকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি নিয়োগ সংস্থা গঠন করতে হবে।
মিলনমেলা তৈরির প্রক্রিয়া: একটি অ্যালগরিদম তৈরি করা যেতে পারে, যা চাকরির চাহিদা এবং বেকারদের দক্ষতার মধ্যে মিল করাবে।
২. বেকারত্বের নতুন সংজ্ঞা ও ন্যূনতম মজুরি
বেকারত্বের সংজ্ঞা: আপনার বেকারত্বের সংজ্ঞা বাস্তবমুখী এবং সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে। এটি বাস্তবায়নে কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন, যাতে বেকারত্ব শুধুমাত্র সংখ্যায় নয়, বরং জীবনযাপনের মান বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি: মজুরি বৃদ্ধির জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন ও নিয়োগকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি থাকতে হবে, যারা বিভিন্ন শ্রেণির কাজের জন্য ন্যূনতম মজুরির হিসাব রাখবে।
৩. অর্থনীতির নতুন মডেল
গরীব মানুষের অগ্রগতি: একটি সূচক তৈরি করতে হবে, যা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, সঞ্চয়ের হার, এবং জীবনযাপনের মান বিশ্লেষণ করবে।
মাথাপিছু আয়ের পরিবর্তে নি¤œ আয়ের মানুষের মজুরি বৃদ্ধি: প্রতি বছরে গরীব মানুষের আয় বৃদ্ধি নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।
মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার নতুন মানদÐ: মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয়, সম্পদ, এবং জীবনমানের উন্নয়নই হবে ‘মধ্য আয়ের দেশ’ নির্ধারণের মাপকাঠি।
৪. আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রভাব হ্রাস
নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতিমালা: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নির্ভরতা কমানোর জন্য দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। রপ্তানি, কৃষি উৎপাদন, এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাধীন অর্থনৈতিক কাঠামো: দেশের জনসাধারণের চাহিদা এবং সমস্যাগুলোর ভিত্তিতে বাজেট ও নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
৫. জনগণের অংশগ্রহণ ও সুশাসন
সমাজের সক্রিয় ভ‚মিকা: জনগণকে নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সংগঠন, এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকর ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: এই প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো প্রয়োজন। সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণকে অবহিত করতে হবে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর রাজনৈতিক সাহস, জনগণের সমর্থন, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে এটি সফল হলে বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটতে পারে, যা দেশের চেহারা পাল্টে দেবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ,গোপালগঞ্জ