আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯) আরম্ভ হয়েছে ১১ নভেম্বর। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রায় ২০০ দেশ এই কপের সদস্য। প্রতিবছর সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সামাল দিতে একত্রিত হন। বিশে^র মোট দেশজ উৎপাদনের ৮০ শতাংশই এই জোটের দখলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের সঙ্গে জড়িত জি-২০ জোটের দেশগুলো। আবার বৈশি^ক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস; তার প্রায় ৮০ শতাংশই এই জোটভুক্ত দেশগুলো নির্গমন করে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈশি^ক কার্বন নির্গমন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২৩ সালে বিশে^ নির্গত কার্বনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০.৬০ বিলিয়ন টন। চলতি বছর কার্বন নির্গমনের এই রেকর্ড ভেঙে যাবে। প্রাক শিল্প যুগের চেয়ে বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে ৫০ শতাংশ বেশি কার্বন অবস্থান করছে। এতে করে বিশে^র উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ ২০২৪ সাল হচ্ছে এই শতাব্দীর সবচেয়ে উষ্ণ বছর। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও রাশিয়া পৃথিবীব্যাপী ৫৫ শতাংশের বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে। আর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় এক্ষেত্রে একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশের দায় এক্ষেত্রে মাত্র ০.৪৭ ভাগেরও কম। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ুর এ পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পাবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দী শেষে বিশ^ থেকে অন্তত ৪৩টি দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশেরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল ডুবে যাবে।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থ সহায়তা দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করা। সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় হলো জলবায়ু অর্থায়ন। প্রতিবছর জলবায়ু আন্দোলন কর্মীরা সম্মেলনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এবার তাদের মূল দাবি, যে ধনী দেশগুলো জীবাশ্ম জ¦ালানি পুড়িয়ে পৃথিবীকে এতদিন উত্তপ্ত করেছে, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ধনী দেশগুলো শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে এখন পর্যন্ত এত বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে, যার ফলে জলবায়ু সংকট তৈরি হয়েছে। জলবায়ু সংকট তৈরিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় কম। তাই জলবায়ুর বিধ্বংসী প্রভাব থেকে দেশগুলোর রক্ষা পেতে সাহায্যের প্রয়োজন হবে। অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখার দায় থেকে দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। এই উদ্যোগ দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে জীবাশ্মভিত্তিক জ¦ালানি থেকে সরে আসতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। জলবায়ু সংকটের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট বিষয়েও সম্মেলনে আলোচনা হবে। ২০০৯ সালের জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তি হয়েছিল, বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়া হবে। শুধু ২০২২ সালে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হলেও অন্যান্য বছর এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। এদিকে, চুক্তিটি এ বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবারের আলোচনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা বিশ^ অর্থনীতির প্রায় ১ শতাংশ।
এবারের কপ ২৯ সম্মেলনে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী কয়লা, তেল কিংবা গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ¦ালানির কারণে এই গ্রহকে উত্তপ্তকারী কার্বনের নিঃসরণ গত বছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা ছিল। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির আওতায় বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন বিশ^ নেতৃবৃন্দ। এ লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামলাতে ২০২৫ সাল নাগাদ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে বড় অর্থনীতির দেশগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা করতে সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ চীন এবং উপসাগরীয় দেশগুলো বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করলেও সহায়তা তহবিলে অর্থ দিচ্ছে না।
তাছাড়া জলবায়ু সম্মেলনের সফলতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ জি-২০ সম্মেলনে কিছু দেশ জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া জাতিসংঘের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক আলোচনাও কোনো ঐকমত্য ছাড়া সমাপ্ত হয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৮) জীবাশ্ম জ¦ালানি ব্যবহার কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে না। অথচ এ বছর বৈশি^ক কার্বন নিঃসরণে নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গ্লোবাল কার্বন বাজেটের প্রধান পিয়েরে ফ্রাইডলিংস্টেইন বলেন, বিশে^ জলবায়ু পরিবর্তনের নাটকীয় প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা জীবাশ্ম জ¦ালানি পোড়ানো কমার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। জীবাশ্ম জ¦ালানির অব্যাহত ব্যবহারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আবহাওয়ার তীব্রতা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে সংকটে ফেলেছে। দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে শুধু দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যেই ফেলেনি প্রাণহানিসহ সম্পদ ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গত অক্টোবরে স্পেনের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়ানো না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপির ২ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৮) বাংলাদেশের কিছু ভালো অর্জন রয়েছে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, অর্থের সহজলভ্য এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে ন্যায্য প্রাপ্তির পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ। ৭০০ মিলিয়ন ডলার লোকসান ও ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠা ছিল কপ ২৮-এর একটি মূল অর্জন। বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ তহবিল বরাদ্দের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের পক্ষে দরকষাকষি করে অনেকাংশে সফল হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিল বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশ ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পক্ষে কাজ করে আসছে। এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে নতুন অর্থায়ন প্রক্রিয়াগুলো কার্যকরী এবং সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ভিত্তিও তৈরি করেছিল। ২৯তম কপ সম্মেলন তাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য অভিযোজন, প্রশমন এবং ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ বাংলাদেশ বিশে^র অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর জলবায়ু বিষয়ে নানা রকম শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। কারণ পরিবেশবান্ধব জ¦ালানিকে তিনি ২০১৬ সালের নভেম্বরে মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে প্রতারণা হিসেবে অভিহিত করেছেন। যুক্তিহীন, অহেতুক এবং সেটা চীনের স্বার্থে চীনাদের তৈরি বলেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তি থেকেও প্রত্যাহার করে নিতে ইচ্ছুক। এতে করে জলবায়ু সহাযতা তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প কড়া ভাষায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এনার্জি নীতির সমালোচনা করেছেন। কাজেই মনে করা হচ্ছে, জলবায়ু সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি হয়তো দেবেন না। জলবায়ু পরিবর্তনের স্বার্থে প্রণোদনা হিসেবে বাইডেন যে ইনফ্লেশন রিডাকশন আইন পাস করিয়েছিলেন; যার মাধ্যমে ভর্র্তুকি ও করে ছাড় দিয়ে সেই অর্থ জলবায়ু রক্ষায় লগ্নি করা হচ্ছে, তা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এবারের সম্মেলনে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ট্রাম্প প্রশাসন পদক্ষেপগুলো এগিয়ে নিতে বাধ্য নয়। জলবায়ু সংকট সমাধানে উৎসাহ প্রদান করতে কপ সম্মেলনের শুরুতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিশে^র কয়েকটি বড় অর্থনীতি ও সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত না থাকায় এর সফলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সম্মেলনে অবশ্য বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক দূত অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের তিনি আশ^স্ত করেন যে, ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন বৈশি^ক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় মার্কিন প্রচেষ্টাকে থামিয়ে দেবে না। তিনি আরও বলেন, এই লড়াই পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পৃথিবী তৈরির জন্য। নির্বাচন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের চেয়ে এ লড়াই বড়। কারণ, আমরা সবাই সংকটে রয়েছি। সংকটমুক্ত হতে পারিনি। যুক্তরাজ্যের জ¦ালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, এই সরকার বিশ^াস করে যে জলবায়ু নিরাপত্তা হলো জাতীয় নিরাপত্তা। বিশে^ সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যান নির্গমনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্তি ৪০০ কোটি টন নির্গমন বাড়তি করবে। এটা সত্যি হলে, পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য। অর্থাৎ গত ৫ বছরে সমগ্র পৃথিবীতে বাতাস, সৌর ও অন্যান্য দূষণমুক্ত নবায়নযোগ্য পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে যা সাশ্রয় হয়েছে, তা দ্বিগুণ অকার্যকর হয়ে যাবে। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে বিশ^ব্যাপী যে একাগ্রতা এসেছে, সেসব উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে না। সম্মেলনে ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিচ বলেন, গত এক বছরে স্পেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং একইসঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধনশীল তাপমাত্রার ভয়াবহ প্রভাবে বিপর্যয়কর বন্যা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে ভঙ্গুর এলাকার অন্যতম ভূমধ্যসাগরে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এই মহাদেশে সবুজ বিপ্লবের উদ্যোগ গ্রহণ এবং একইসঙ্গে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন: বন্যা ও খরার বিরুদ্ধে সহনশীলতা আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের জলবায়ুপ্রধান সাইমন স্টিয়েল জলবায়ু বিষয়ে সংহতির আবেদন জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশি^ক সহযোগিতার তিনি আহ্বান জানান। জাতিসংঘের অর্থ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কার্বন নিঃসরণ ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের জন্য শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চাহিদা প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন প্রশমন ও অভিযোজনে রাষ্ট্রীয় নির্ধারিত অবদানের নিরিখে এশিয়ার সবচেয়ে বেশি অর্থের প্রয়োজন। এরপর প্রয়োজন আফ্রিকার। চাহিদার ভিত্তিতে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান রয়েছে প্রথম সারিতে। আর আয়তন, জনসংখ্যা ও দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের নিরিখে প্রথমদিকে বাংলাদেশও রয়েছে। জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশের চাহিদা বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বছরের পর বছর বাংলাদেশকে যে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা পূরণ ও পরিচ্ছন্ন শক্তি জোগানে এই অর্থ প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিস্থিতিতে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ দেশগুলো ন্যূনতম ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি করছে। ক্লাইমেট ফাইন্যান্স গ্রুপ ফর লাতিন আমেরিকা অ্যান্ড দ্য ক্যারিবিয়ানের সান্ড্রা গুজম্যান বলেছেন, আমরা সব উন্নত দেশকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশগুলোকে ঋণ নয়, অনুদান দিতে হবে। বেসরকারি খাতের অর্থায়ন নবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রকল্পগুলো চালাতে পারে। তবে তিনি বলেন, কিছু দেশ বলছে, গ্যাসে বিনিয়োগও জলবায়ু অর্থায়ন। কারণ গ্যাস কয়লার চেয়ে কম নির্গমন করে। কিন্তু গ্যাস আসলে জীবাশ্ম জ¦ালানি। আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই সম্মেলনে প্রাথমিক একটি চুক্তির খসড়া করা হয়েছে। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ক্রেডিট বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া এই চুক্তির মূল বিষয়। এক দশক ধরে আলোচনার পর প্রায় ২০০টি দেশ কার্বন বাজারকে গতিশীল করতে নিয়মবিধি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল-এর প্রতিনিধি এরিকা লেনন এই খসড়া চুক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জলবায়ু সম্মেলন কি প্রাণ হারাচ্ছে!
শীর্ষ সংবাদ: