যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল উদ্যাপিত হলো সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এবারে গ্রহণ করা হয় ব্যাপক কর্মসূচি। এমন একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হলো যখন জেনারেল ওয়াকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় গণমানুষের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ না করার দেশপ্রেমিকসুলভ পদক্ষেপ সশস্ত্র বাহিনীকে দেশবাসীর কাছে আবারও আস্থার প্রতীক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর ত্যাগ, সংগ্রাম আর বীরত্বের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর পালন করা হয় দিবসটি। সশস্ত্র বাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একাত্তরের সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলোয় এ দেশের মানুষ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সম্মিলনে যে অজেয় মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল তারই গর্বিত উত্তরাধিকার লাভ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। মূলত মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এদিনে।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডব এবং নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যার প্রতিবাদে বিদ্রোহ করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার এবং বাংলাদেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ। শুরু হয় সুমহান মুক্তিযুদ্ধ। এর পর যুদ্ধে যোগ দিতে থাকেন বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সঙ্গে মুক্তিপাগল বাঙালি অস্ত্র হাতে পাকিস্তানিদের অস্ত্রের জবাব দিতে থাকে। আমাদের মুক্তির সংগ্রাম স্বাধীনতার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে পুরো বাংলাদেশকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর এবং কিছু সাবসেক্টরে। সেক্টরগুলোর দায়িত্ব নেন সুশিক্ষিত পেশাদার সামরিক কর্মকর্তারা। মুক্তিসংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৭১-এর নভেম্বর মাসে একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।
সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর কয়েক হাজার কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছেন। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে এপিসি বা যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ওয়ার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ, শান্তিরক্ষা ইনস্টিটিউট, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস ব্রিগেডসহ কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অগণিত নারীও এখন সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত।
আজ উন্নত বিশ্বে সামরিক বাহিনী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান মনে রাখা দরকার। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সর্বাধুনিক সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করা সময়ের দাবি। দেশের মাটি ও মানুষ এবং দেশমাতৃকার সেবায় সশস্ত্র বাহিনীর আরও সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস
শীর্ষ সংবাদ: