স্নাতকে ভর্তি হওয়ার আগে আমাদেরকে লম্বা একটা সময় পড়াশোনায় পার করে আসতে হয়। ১২ বছরের বিস্তৃত শিক্ষা জীবনে অনেক ধরনের জ্ঞানার্জন করতে হয়। ভর্তি পরীক্ষার জন্যও বিস্তর পড়াশোনা করে মেধার সাক্ষর রাখতে হয়। তবে পুঁথিগত বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত হলেও নৈতিক শিক্ষায় বরাবরের মতোই শিক্ষার্থীদের ঘাটতি রয়ে যায়। যার মধ্যে পরসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা কিংবা ধৈর্য্যের অভাব অন্যতম। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সহনশীলতার চর্চা বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও তা ক্রমাগত তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মানেই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারামারি করতে হবে কিংবা ভাবগম্ভীর চলাফেরা করতে হবেÑ এমন ভাবনা আমাদের মগজে ঢুকে গেছে! অতি সাধারণ বিষয়ে এখন শিক্ষার্থীরা ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন।
সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে একই রকম ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর বিনোদনের পরিবেশকে রীতিমতো কুলষিত করছে, যা নিতান্তই লজ্জাজনক ব্যাপার। অথচ খেলা মানে বিনোদন। খেলায় হারজিত থাকবে। থাকবে হাসিখুশি, আনন্দ-উচ্ছ¡াস কিংবা বাঁধভাঙা উল্লাস। কিন্তু হচ্ছে হিতে বিপরীত!
শুধু খেলাধুলা নয়, দাবি আদায়ের নামে তথাকথিত আন্দোলনেও চলন্ত ট্রেনে অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। আহত হয়েছে সাধারণ যাত্রী, বৃদ্ধ, শিশুসহ অনেকে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে সত্যিই নৈতিক শিক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রেজুয়েট বের হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু অর্জনের খাতায় নৈতিক শিক্ষা কতটা স্থান করে নিতে পেরেছে তা ভাবার বিষয়। প্রচলিত আছেÑ ফলবান বৃক্ষ নুইয়ে পড়ে। যে যত বেশি জ্ঞানী, তার বিবেচনাবোধ এবং আচার-আচরণ তত বেশি নম্র ভদ্র এবং বিনয়ী। আমরা অনেকে নামমাত্র উচ্চশিক্ষার মঞ্চে দাবিয়ে বেড়াচ্ছি বটে; কিন্তু আমাদের বিনয়ীর প্রশ্নে নিশ্চিত হার মানতে হবে। সংঙ্কীর্ণ মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করার অভ্যাস করা শিখতে হবে। বিবেক দিয়ে ভাবতে হবে, উচ্চশিক্ষা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পেশি শক্তির প্রদর্শন কিংবা ভাঙচুর করে পত্রিকার শিরোনাম হওয়াতে কৃতিত্ব নেই। আসল কৃতিত্ব হলো অর্জনে, ব্যবহারে কিংবা আচার-আচরণে। এজন্য তেনজিন গিয়াতসো বলেছিলেনÑ ‘সহনশীলতা দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং শক্তির লক্ষণ।’ একইভাবে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেছিলেন—Ñ‘সহনশীলতা ও ভালোবাসা শক্তিশালী হাতিয়ার, যা ঘৃণা ও বিভেদকে জয় করতে পারে।’ আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার সারথিরা একগুঁয়েমি থেকে বেরিয়ে পরসহিষ্ণুতা এবং সহনশীলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেনÑ এটাই প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়