গণিত বিজ্ঞানের ভাষা, মহাবিশ্বের ভাষা। গণিতবিদরা এমন কিছু নিয়মকানুন আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে আপেক্ষিকতা তত্ত¡ থেকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পর্যন্ত সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায়। গণিতকে বলা হয় বিজ্ঞানের মা। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিতের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের যেন প্রধান আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে এই গণিত। গণিতকে যদি সকল ছাত্রছাত্রীদের কাছে রসালো এবং মজাদারভাবে উপস্থাপন করা যেত তাহলে গণিতের কদর ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রথম সারিতে থাকত। এখন গণিত নিয়ে কেন পড়ব তা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।
বিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে গণিতের সাহায্যে প্রকাশ করে গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বাস্তব সমস্যাগুলো গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে সমাধান করা হয় । স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগ রয়েছে। গণিত বিভাগ ছাড়াও বিজ্ঞান, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, বাণিজ্য অনুষদসহ অনেক অনুষদের শিক্ষার্থীদেরই গণিত বিভাগের অধীনে সম্পূরক কোর্স পড়তে হয়।
কী পড়ানো হয়
ক্যালকুলাস, অন্তরীকরণ, যোজজীকরণ, গাণিতিক বিশ্লেষণ, ও দ্বিমাত্রীক- ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি, বীজগণিত, রৈখিক বীজগণিত, ইত্যাদি স্নাতক পর্যায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে পড়ানো হয়। সম্পূরক বিষয় হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান, ইংরেজি, পরিসংখ্যান, কম্পিউটারে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে কিছু ল্যাব কোর্স রয়েছে, সেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করে গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়। তার তৃতীয় বর্ষে সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণ-বিষয়ক কোর্স রয়েছে। যেখানে বিমূর্ত বীজগণিত (অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যালজেব্রা), গ্রæপতত্ত¡ (গ্রæপ তত্ত¡) ইত্যাদি পড়ানো হয়। চতুর্থ বর্ষে, আংশিক অন্তরীকরণ সমীকরণের তাত্বিক ও সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয় কোষ হিসেবে ফাংশনাল অ্যানালাইসিস শেখানো হয়। এছাড়া চতুর্থ বর্ষে গণিতের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিবেদন লিখতে হয়। স্নাতকোত্তরেও গবেষণামূলক প্রতিবেদন বা থিসিস লিখতে হয় যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে।
ক্যারিয়ার কোথায়
গণিত বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশা, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চাকুরীসহ গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারি চাকরি, ব্যাংকসহ করপোরেট চাকরিতেও গণিতের শিক্ষার্থীরা চাকরি করছেন। গণিত বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বেকার বসে থাকতে দেখা যায় না। বিভিন্ন স্কুল, কলেজেসহ কোচিং সেন্টারগুলোতেও শিক্ষকতা করছেন তারা।
ভবিষ্যৎ কী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে ভবিষ্যতে মানুষ তাদের চাকরি হারাবে কী না, এটি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। তবে ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে গণিতের গুরুত্ব কোনো অংশে কমবে না। কারণ এই যুগের ভিত্তি স্থাপিত হবে গণিতের ভাষা ও বিভিন্ন সূত্রের উপর নির্ভর করেই। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু মানুষের গণিত ব্যবহার, গণিত নিয়ে গবেষণা কোনো অংশে কমবে না। গণিত এমন একটি বিষয় যা ছাড়া আধুনিকতার ছোঁড়া কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব।
কারা পড়বে
গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের ভাষায়, ‘গণিত তার কাছেই তার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়, যে বিশুদ্ধ মন ও ভালোবাসা নিয়ে গণিতের দিকে অগ্রসর হয়। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, যেসব শিক্ষার্থী গণিতকে ভালোবাসেন, গণিতের জন্য নিজের মন সম্পূর্ণ উৎসর্গ করতে পারবেন তাদেরই এই বিভাগে পড়া উচিত। গণিত একটি সাধনা। যারা গণিতকে সাধন করতে পারবেন তাদেরই উচিত গণিতকে নিয়ে পড়া। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীরা গণিতের দক্ষতা প্রয়োগ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের গুরুত্ব বাড়াতে সক্ষম হবেন। গণিতের প্রতি যে ভয়ভীতি আছে দূর করে তারা সামনের দিকে অগ্রসর হবেন।
গণিত হলো যৌক্তিকতার একটি বিষয়, কাঠামোগত সম্পর্ক এবং শৃঙ্খলার বিজ্ঞান, যা বস্তুর আকার গণনা, পরিমাপ এবং ব্যাখ্যা করার প্রাথমিক অনুশীলন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। উপরন্ত এটি পরিমাণগত গণনা এবং যৌক্তিক যুক্তি নিয়ে কাজ করে। গণিত বলতে অধ্যয়ন করা, শেখা বা জ্ঞান অর্জন করাকে বোঝায়। একবিংশ শতকের এই যুগ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশে গণিতের ভ‚মিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও গণিতের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের গণিত বিভাগে পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া উচিত। গণিতকে জটিল নয় বরং রসালো এবং মজাদারভাবে উপস্থাপন করা দরকার।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়