ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাঘিনীদের সাফজয়

আদিয়াত উল্লাহ

প্রকাশিত: ২০:১০, ২০ নভেম্বর ২০২৪

বাঘিনীদের সাফজয়

২০২৪ সালে সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ৭ম আসরে বাংলাদেশের দামাল মেয়েরা শিরোপা ছিনিয়ে আনে। অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল  খেলায় নেপালের মেয়েদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দেশের ফুটবল অঙ্গনের দুর্দিনে নারী ফুটবলারদের বিভিন্নরকম সমস্যাসংকুল একটি দল নিয়ে এমন অঞ্চলভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রমীলা ফুটবল ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ১৪০তম এবং ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ১৮৫তম অবস্থানে থাকা ফুটবল খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি অবশ্যই একটি অনুপ্রেরণার বিষয়। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ছিনিয়ে এনেছিল। এবারের আসরের ফাইনালে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্মানে ভূষিত হয়েছে। এরকম বড় কোনো শিরোপা জিতে সেটি ধরে রাখার কৃতিত্ব ছেলেরা দেখাতে পারেনি। এ কৃতিত্ব শুধু প্রমীলা ফুটবলারদের। দেশের জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা একসময় দেশের সম্মান রক্ষার ও তা বৃদ্ধির জন্য লড়তেন। তারা প্রায়শই নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের জাতীয় ফুটবল দলগুলোর বিপক্ষে জয়লাভ করতেন। সে সময়কার সেরা অর্জন ছিল ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ১১০তম স্থান অর্জন। প্রমীলা ফুটবলে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ অর্জন ছিল ২০১৩ সালে ১০০তম স্থান অর্জন। নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের বিপক্ষে বিজয় অর্জন একসময় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের সকল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও দ্বিপক্ষীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রায়ই এশিয়ার দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে জয়লাভ করত। জাপান, ইরান প্রভৃতি এশিয়ার শক্তিশালী ফুটবল দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলারদের দেখা যেত বাঘের মত বুক চিতিয?ে সাহসিকতার সাথে ফুটবল নিয?ে দেশের সম্মান বৃদ্ধির জন্য। এমনকি ইরানের মত শক্তিশালী দেশের সাথেও বাংলাদেশের জয়লাভ করার রেকর্ড রয?েছে সেসময় । সে সময় ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয?ে ১১০ তম পর্যন্ত উঠে এসেছিল এবং এশীয় ফুটবলের মানের পর্যায?ে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন কিংবদন্তি ফুটবলাররা। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের এসব অর্জন বর্তমানে কেবলই স্মৃতিতে পরিণত হয?েছে। ভুটানের মত দেশের বিপক্ষে সহজে জেতার পরিবর্তে কষ্ট করে জিততে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য ফুটবল ফেডারেশনের অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ী। ছাত্রজনতার আন্দোলনে গত ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফুটবল ফেডারেশনের পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন কমিটির নিকট প্রত্যাশা থাকবে যে, তারা যেন ফুটবলের অব্যবস্থাপনার দিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসন করে এবং খেলোয়াড়দের জন্য উন্নতমানের ফুটবল মাঠ, আবাসিক ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে। তাহলেই আশা করা যায়, বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি দিন ফিরে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×